দেশে মাদকের বিস্তৃতি ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। মাদকাসক্তদের শীর্ষে দেশের তরুণ সমাজ। সর্বনাশা মাদকের মরণ ছোবলে আক্রান্ত তরুণ ও যুবসমাজ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে। রবিবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের আলমপুরে অবস্থিথ আন্তর্জাতিক মানের স্পেশালাইজড মাদকাসক্তি ও মানসিক হাসপাতাল আহ্ছানিয়া হেনা আহমেদ মনোযতœ কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য উঠে আসে। কেন্দ্র সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপনা করেন কেন্দ্রটির ম্যানেজার দীপক হাসদাক এবং সিনিয়র কাউন্সিলর আবু হাসান মন্ডল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ৯ ফেব্রæয়ারি কেন্দ্রটির যাত্রা শুরু হয়। তবে, ২০২৩ সালের ৮ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ২০২১ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ১০৮ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। যাদের মধ্যে শতকরা আশি ভাগ ছিলেন তরুণ।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রে চিকিৎসারত দুই জন রোগী তাদের মাদকনির্ভশীল জীবন ও চিকিৎসারত জীবন সম্পর্কে অনুভ‚তি প্রকাশ করেন। প্রকৃতির সবুজ পরিবেশের মধ্যে এই মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা ব্যবস্থা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গড়ে তোলার আহবান জানান তারা।
কেস স্টাডি ১
রাজধানীর স্বনামধন্য ইউনির্ভারসিটি ছাত্র পুলক ( ছন্দনাম) বয়স ২৫ বছর। ছোট বেলা থেকে প্রচন্ড কৌতুহলী তার মধ্যে অনাগত প্রশ্ন সঙ্গময় দানা বাধে তার এই আচারণর তাকে আস্তে আস্তে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও পারিবাকির ধর্মীয় মূল্যেবোধের সাথে চর্চার একটা মত পার্থক্য দেখা যায়। তার সাথে পারিবারিক দূরত্ব জন্ম হয়। তিনি ঘরবিমূখ হয়ে পড়েন এবং অসৎ বন্ধুদের সাথে মেলামেশা শুরু করেন। প্রথমে গাঁজা ও পরে মরফিনের প্রতি ভীষনভাবে আসক্ত হয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে হতাশা থেকে গাঁজায় আসক্তি বাড়তে থাকে। তবে তিনি অন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতিতে ভর্তি হন। তার ভাল লাগার বিষয় ছিল সঙ্গীত। পছন্দের বিশ^বিদ্যালয় ও বিষয় নিয়ে পড়তে না পারায় হতাশা আরো বেড়ে যায়। গাঁজার পাশাপাশি মরফিনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে যা তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রার চরম ভাবে ব্যহত করে। পরে তার পরিবার তাকে একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করান। চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেও পুনরায় নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন। তাই তাকে আবার চিকিৎসা প্রয়োজনে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে আহ্ছানিয়া হেনা আহমেদ মনোযতœ মুন্সিগঞ্জ শাখায় ভর্তি করেন।
প্রথম দিক এখানেও তার ভাল লাগেনি। দিন যত যায় এখানকার প্রকৃতি, সবুজ পরিবেশ, চিকিৎসক ও স্টাফদের আন্তরিকতায় পজিটিভ মটিভেশন তৈরি হয় তার মধ্যে। তিনি এখন সুস্থ। ফিরে যাবেন স্বাভাবিক জীবনে।
কেস স্টাডি ২
ভীষন চঞ্চল, চটপটে ও প্রানবন্ত একজন অর্ণব ( ছন্দনাম)। তার প্রথম জীবনে এসএসসি পর্যন্ত কোন দ্বিধাদ্ব›দ্ব জীবনে নেই। সব ভালোই কাটছিলো। হঠাৎ কলেজে উঠার পর গাঁজা সেবন শুরু হয়। এরপর কোন রকম এইচএসসি পাশ করেন অর্ণব। ভর্তি হন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নতুন বন্ধুদের নিয়ে নেশার মাত্রা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সেমিষ্টার ড্রপ হতে হতে তার জীবনে অন্ধকারের পর্দা নেমে আসে। কোনভাবেই পথ পাচ্ছিলেন না। তখন আহ্ছানিয়া হেনা আহমেদ মনোযতœ কেন্দ্রের খোঁজ পেয়ে এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। গ্রামের সবুজ প্রকৃতি, পাশেই খেলার মাঠ, চিকিৎসা কেন্দ্রের বারান্দায় দাঁড়ালে নীল দিগন্ত, সব মিলিয়ে তার কাছে নতুন জীবন ধরা দেয়। এখন তিনি সুস্থ। ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে। নতুন জীবন। নতুন আলো।
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি মাদকনির্ভরশীলতা ও মানসিক সমস্যাগ্রস্থদের জন্য প্রায় সাড়ে ৩ বছর যাবৎ সাফল্যের সাথে বিজ্ঞান ও প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা প্রদান করছে। চিকিৎসা কেন্দ্রটি সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। এছাড়াও কেন্দ্রটির বিশেষ সুবিধা হচ্ছে কেন্দ্রের সাথেই অবস্থিত হেনা আহমেদ হাসপাতাল থেকে কেন্দ্রে চিকিৎসারত মাদকনির্ভরশীল ও মানসিক রোগীদের প্রাথমিক ও জরুরী স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।