spot_img

শরীফ-শরীফার গল্প বাতিলের সুপারিশের প্রতিবাদে উদীচীর সমাবেশ

নারী-পুরুষের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরও সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধাসহ বাঁচার অধিকার আছে। নতুন প্রণীত শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির বইয়ে থাকা ‘শরীফ-শরীফা গল্প’ নামক লেখাটি বাদ দিতে বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের প্রতিবাদে উদীচী আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেছেন বক্তারা।
গতকাল শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবীর জানাল সংগঠনটি।
সমাবেশের শুরুতে সমবেতভাবে ‘সেদিন আর কত দূরে’ গানটি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীরা। এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি শান্তা, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত, আকরামুল হক, প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের পক্ষে রঘু অভিজিৎ রায়, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল কবির, কৃষক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন খান, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি জামসেদ আনোয়ার তপন, সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে ও সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য আরিফ নূর। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।
অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, ‘শরীফ-শরীফার’ গল্পটি ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হলেও এটি পর্যালোচনায় যে বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়েছে তাতে ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়ের অধ্যাপকের আধিক্য দেখা গেছে। সেখানে কেন সমাজবিজ্ঞান বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের প্রাধান্য দেয়া হয়নি সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বদিউর রহমান বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের দাবি মেনে রাষ্ট্র তাদেরকে নাগরিক হিসেবে অনেক আগেই স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের বাকি সকল নাগরিকের মতো ভোটাধিকারসহ অন্য সব নাগরিক অধিকারই তারা ভোগ করেন। দুঃসহ জীবনযাপন ও ভিক্ষাবৃত্তি থেকে তাদের মুক্ত করতে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যা সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের অনেকেই তাদের মেধার পরিচয় দিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সম্মানজনক অবস্থানে থেকে দেশসেবা করছেন। তাদের পথচলা আরো সুগম করতে এবং কোমলমতি শিশুরা যাতে তাদের বিষয়ে কোন বিরুপ বা বৈষম্যমূলক মনোভাব পোষণ না করে সেজন্য ‘শরীফ-শরীফার গল্প’ অন্তর্ভুক্ত করা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। এটি পাঠ করলে ভবিষ্যত প্রজন্ম মানুষে মানুষে ভেদাভেদ শিখবে না বলে মন্তব্য করেন উদীচীর সভাপতি।
তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি শান্তা বলেন, সমাজে নারী ও পুরুষের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরও অধিকার আছে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার। এ বেঁচে থাকায় এতো ঝড় ঝাপটা, বঞ্চনা, অপমান?
অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘শরীফ-শরীফার গল্প’ লেখাটিতে ১৯টি শব্দ সমাজব্যবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়’ বলে মত দিয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এসব শব্দ ছাড়া গল্পটি অপূর্ণ থাকে উল্লেখ করে কমিটি পুরো গল্পটিই বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছে বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। অথচ কোন শব্দগুলো অসঙ্গতিপূর্ণ তা বোধগম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, মূলত ‘শরীফ-শরীফা’ গল্পটিতে সমাজের অন্যতম একটি জনগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ বা ‘হিজড়া’দের নিয়ে একটি নিরীহ কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। একইসাথে সেখানে এই জনগোষ্ঠীর মানুষের প্রতি সমাজের বাকিরা কী ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করে তা বর্ণনা করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সব মানুষকে সমান চোখে দেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু, পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের পর থেকেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ গল্পটিকে নিয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। গল্পটিতে সমকামিতা ও যৌনতাকে উস্কে দেয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে যে দাবি করা হচ্ছে সেটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করে উদীচী। সচেতন মানুষ যারা গল্পটি পড়েছেন তারা সবাই একমত হয়েছেন যে এখানে শুধুমাত্র থার্ড জেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার ইতিবাচক প্রয়াস করা হয়েছে। অমিত রঞ্জন দে বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনে গল্পটি বাদ দেয়া হলে তা পক্ষান্তরে মৌলবাদী, সা¤প্রদায়িক অপশক্তিকেই প্রশ্রয় দেয়ার সামিল হবে।
সমাবেশের একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন মীর সাখাওয়াত হোসেন, অভিজিৎ পাল, হৃদিক জাহান ও শুভ্র। এছাড়া, দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের আবৃত্তি বিভাগের শিল্পীরা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন সৈয়দা রতœা।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ