আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ১০ বছরে ৭৬২ জন নারী চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। এরমধ্যে মাদককাসক্তি সমস্যার জন্য চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৬৩ জন। মাদক নিরাময় চিকিৎসা সেবা নেয়া নারীদের মধ্যে ৭৮ শতাংশই ইয়াবা ও গাঁজায় আসক্ত। এরমধ্যে একাধিক মাদকসহ ইয়াবায় আসক্ত ৩৯ শতাংশ, গাঁজায় আসক্ত ৩৯ শতাংশ। এছাড়াও ঘুমের ওষুধ, মদ, শিরায় মাদক নেয়া ও অন্যন্য মাদক সেবনকারী রয়েছে। গত বছরের তথ্যের তুলনায় এই হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গতবছর ইয়াবায় আসক্তির হার ছিল ৩৩ শতাংশ, গাঁজায় ২৮ শতাংশ ও ঘুমের ওষুধে আাসক্তি ছিল ১৬ শতাংশ। এছাড়া মানসিক রোগের মধ্যে সিজোফ্রিনিয়ায় ৩৫ শতাংশ, মুড ডিজঅর্ডার ২৬, বাইপোলার ১২, ডিপ্রেশন ১০, ওসিডি ৬ শতাংশসহ বাকিরা অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল।
নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটির ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল সোমবার বেলা ১১ টায় রাজধানীর শ্যামলীস্থ ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য তুলে ধরা হয়। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসা কেন্দ্রটির মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস মজুমদার। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সাইক্লোজিস্ট রাখী গাঙ্গুলীর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্র ব্যবস্থাপক ফারজানা ফেরদৌস। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৭৬২ জন রোগীর মধ্যে ৭০ শতাংশ চিকিৎসার মেয়াদ পূর্ন করেছেন। মেয়াদ পূর্ণ না করে চলে গেছে ২২ শতাংশ এবং বিভিন্ন কারনে ৪ শতাংশ রোগীকে রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে ৪ শতাংশ রোগী চিকিৎসারত আছেন।
বক্তরা বলেন, মাদকসক্ত নারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়লেও মাদকের চিকিৎসায় পিছিয়ে আছে নারীরা। এর অন্যতম কারণ নারীদের মাদক নিরাময়ে তেমন ব্যবস্থা না থাকা। মাত্র ৮টি নিরাময় কেন্দ্রে যৌথভাবে নারীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। সেগুলো শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রীক হওয়ায় অন্য বিভাগের মাদকাসক্ত নারীরা সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ মাদকের প্রভাব পুরুষের চেয়ে ভিন্ন ভাবে নারীদের ক্ষতি করে, এক্ষেত্রে বলা যায় শারীরিক, মনসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্যে উপরে প্রভাব পড়ে। যা একজন নারীর সন্তান ধারণ, জন্ম ও লালন পালন মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বক্তারা আরো বলেন, সময়ের চাহিদার সাথে সমন্বয় রেখে আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। যা দেশের একমাত্র নারীদের পূর্নাঙ্গ চিকিৎসা কেন্দ্র। শুরু থেকে এই চিকিৎসা কেন্দ্র নারীদের মাদকনির্ভরশীলতা, মানসিক ও আচরনগত সমস্যার চিকিৎসা দিয়ে আসছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি মাদকনির্ভরশীলতা ও মানসিক সমস্যাগ্রস্থ নারীদের জন্য ১০ বছর যাবৎ সাফল্যের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা দিচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে ইকবাল মাসুদ বলেন, নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি পুরুষের তুলনায় বেশ জটিল ও সময় সাপেক্ষ। ক্রমবর্ধমান নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের দিকে বিশেষ নজর দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে অবিভাবক ও নীতিনির্ধারকদের বিশেষ ভ‚মিকা পালন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এটি দেশের একমাত্র সম্পূর্ণ নারী কর্মীদ্বারা পরচিালিত চিকিৎসা কেন্দ্র যা রোগীদের নিরাপত্তাসহ চিকিৎসা নিশ্চিতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই কেন্দ্রে রোগীদের জীবন দক্ষতা বৃদ্ধি ও পুনর্বাসনের জন্য ভোকেশনাল ও উদ্যেক্তা কোর্স করানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী) আসাদুজ্জামান খান আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম একমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র যা সর্ম্পূণ নারী কর্মী দ্বারা পরিচালিত। চিকিৎসা কেন্দ্রটি সকল আধুনিক সুযোগসুবিধার পাশাপাশি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। এটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ২০২৩ সালে দেশের সেরা চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে পুরষ্কার অর্জন করে।