spot_img

আমদানি ফের বাড়ছে

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে আমদানি খাতে ব্যয় বেশ কমে এসেছিল। কিন্তু অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ফের বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি ব্যয়ের সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় ১৫ মাস ধরে কমার পর ফেব্রæয়ারিতে আমদানি বেড়েছে । গত ফেব্রæয়ারি মাসে ৫২৫ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। গত বছরের একই মাসের তুলনায় যা ৬২ কোটি ডলার বা ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। গত জানুয়ারি পর্যন্ত আগের ১৫ মাস প্রতি মাসে আমদানি ব্যয় আগের বছরের একই মাসের চেয়ে কম ছিল।
জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রæয়ারি) সার্বিক আমদানি কমেছে। তবে একক মাস হিসেবে ফেব্রæয়ারিতে কেন বাড়ল তা বলা মুশকিল। তবে রমজানের পণ্য আমদানির একটা প্রভাব থাকতে পারে।
অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকারারা বলছেন, আমদানি বাড়ার ভালো-মন্দ দুটি দিক আছে। অর্থনীতি বড় হলে আমদানি বাড়ে। এটাই স্বাভাবিক। আমদানি বাড়বে, দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। নানা পদক্ষেপে সেটা কমে এসেছিল। এখন আবার বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমদানি রিজার্ভের উপর চাপ পড়বে।
তবে ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে আবারও ২০ বিলিয়ন ডলারের উপরে উঠেছে। গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। গত মাসের শেষ দিকে (২৭ মার্চ) রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৮১ কোটি ডলারে আর বিপিএম-৬ ছিল ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলার (১৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন)। চলতি মাসের ৮ এপ্রিল গ্রস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৩৮ কোটি ডলারে আর বিপিএম-৬ হয়েছে ২ হাজার ১০ কোটি ডলারে (২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার।
সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদÐে বাংলাদেশ এখন দার প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হল বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একক মাস হিসেবে ফেব্রæয়ারিতে আমদানি বাড়লেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রæয়ারি) কম রয়েছে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ সময়ে মোট ৪ হাজার ৪১০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এ সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি, ভোগ্যপণ্যসহ বেশির ভাগ পণ্যের আমদানি কমেছে। নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা শুরুর পর গত অর্থবছর (২০২২-২৩) মোট ৭ হাজার ৫০৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়। আমদানিতে প্রতি মাসে গড়ে ব্যয় হয় ৬২৫ কোটি ডলার। আর বিধিনিষেধের আগে ২০২১-২২ অর্থবছর মোট আমদানি হয়েছিল ৮ হাজার ৯১৬ কোটি ডলার। প্রতি মাসে গড় ব্যয় ছিল ৭৪৩ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত মূলধনি পণ্যের এলসি ( ঋণপত্র) ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ কমে ৭৩০ কোটি ডলারে নেমেছে। মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ কমে নেমেছে ২ হাজার ৬৬৮ কোটি ডলারে। তৈরি পোশাক সংশ্লিষ্ট পণ্যের আমদানি ১০ দশমিক ১০ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯১ কোটি ডলারে নেমেছে। এ ছাড়া ভোগ্যপণ্যের আমদানি ৩৫ শতাংশ কমে ১১৫ কোটি ডলারে নেমেছে। ভোক্তা পণ্যের মধ্যে চিনি আমদানি বেড়েছে ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ, মসলা প্রায় ১৮ শতাংশ এবং দুধ ও ক্রিম ৬ শতাংশ। তবে ডাল ৩৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ভোজ্য তেল ৩১ দশমিক ৪০ শতাংশ কমেছে। সামগ্রিকভাবে ভোগ্যপণ্যের আমদানি সাড়ে ১৬ শতাংশ কমে ৩০৭ কোটি ডলারে নেমেছে।
ব্যাংকাররা জানান, আমদানি কমায় বাণিজ্য ঘাটতি অনেক কমেছে। ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে। তবে এখনকার মূল সংকট আর্থিক হিসাব নিয়ে। গত ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত আর্থিক হিসাবে ৮ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মূলত নতুন করে ঋণ ও বিনিয়োগ কমা এবং পুরাতন ঋণ পরিশোধের চাপের কারণে এমন হয়েছে। এতে করে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ৪ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি রয়েছে।
আমদানি কমাতে প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয় ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল। ওই দিন এক সার্কুলারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিশুখাদ্য, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প এবং কৃষি খাতসংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির বিপরীতে ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি) নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়। এরপর ১০ মে বিলাসপণ্য আমদানি কমাতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করে আরেকটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়, সব ধরনের মোটর কার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকসসামগ্রীর আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে অতি জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে।
এরপর ৫ জুলাই আরও কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব ধরনের মোটর কার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকসসামগ্রী, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালি বৈদ্যুতিকসামগ্রী বা হোম অ্যাপ্লায়েন্স, পানীয়সহ বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে আমদানিকারকরা ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাবেন না বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এসব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে বলা হয়, আগে যা ছিল ৭৫ শতাংশ।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ