রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও ভবনে অভিযান পরিচালনা করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ সময় অগ্নিনিরাপত্তার ঝুঁকি ও আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ থাকায় এসব ভবন ও রেস্তোরাঁ সিলগালা করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সকালে বেইলি রোডে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে রাজউক। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনির হোসেন হাওলাদারে নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় তিনি নবাবী ভোজ নামে একটি রেস্তোরাঁয় এসে দেখেন এটি বন্ধ। সেখানে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশে টানিয়ে দেয়। নোটিশে বলা হয়, ‘গ্রাহকদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে সা¤প্রতিক সময়ে সংঘটিত ভয়াবহ দুর্ঘটনা আমলে নিয়ে যথাযথভাবে জরুরি ভিত্তিতে সঠিকভাবে সংস্কারের কাজ চালু থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য রেস্টুরেন্টটি বন্ধ থাকবে। এ জন্য সবার কাছে আমরা দুঃখিত’। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনির হোসেন হাওলাদার সাময়িক সময়ের জন্য রেস্টুরেন্টটি সিলগালা করে দেন।
এছাড়া বেইলি রোডে অবস্থিত সুলতানস ডাইনেও অভিযান চালায় রাজউক। এ সময় রেস্তোরাঁটির উপস্থিত কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক কোনও কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এটিও সিলগালা করা হয়। কাগজপত্র দেখাতে পারলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান মনির হোসেন হাওলাদার।
অভিযানকালে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নিয়মিতই অভিযান পরিচালনা করে থাকি। কিন্তু কোনও দুর্ঘটনা হলে সেগুলোর খবর সামনে আসে। প্রয়োজনের তুলনায় রাজউকে লোকবল কম রয়েছে বলেও এ সময় তিনি জানান।
সকালে একই সময় রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় ‘স্কাইভিউ নাইটিঙ্গেল টাওয়ার’ নামক আট তলা আবাসিক ভবনে যান তিনি। এই ভবনের নিচতলায় একটি কাপড়ের শোরুম এবং বাকি তলাগুলোতে একটি করে রেস্টুরেন্ট দেখা গেছে। এছাড়া পার্কিংয়ের জায়গায় একটি রেস্টুরেন্টের নির্মাণকাজ চলতে দেখা যায়।
অভিযান শেষে আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ ও অগ্নিনিরাপত্তার ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে ভবনটি সিলগালা করে দেন মো. জাহাঙ্গীর আলম। এবং ভবনের সামনে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩ অনুযায়ী ‘এই ভবনটি অগ্নিনিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা একটি ব্যানার টানিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভবনটি অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। তাই আপাতত বন্ধ থাকবে। ভবন মালিক এবং সংশ্লিষ্ট রেস্তোরাঁর মালিকরা সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারলে পরবর্তীতে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে অভিযানের খবর পেয়ে স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করে রাখা হয়। ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দিনব্যাপী অভিযান চালু রাখতে না পেরে চলে যান। প্রসঙ্গত, গত ২৯ ফেব্রæয়ারি রাতে বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজের আগুনে নারী শিশুসহ ৪৬ জন মারা যান। তাদের মধ্যে ৪৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুই জনের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। এরপর রবিবার ৩ মার্চ রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে পুলিশ। তারই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার ৫ মার্চ রাজধানীতে অননুমোদিত রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় রাজউক ও ডিএসসিসি।