রাজধানীর শাহজাহানপুরের ঝিল মসজিদ এলাকার একটি বাসায় ১০ ঘন্টার ব্যবধানে দুই দফায় গ্যাস বিস্ফোরণে সাতজন দগ্ধ হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা ও সন্ধ্যা ৬টার দিকে এসব ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
দগ্ধরা হলেন বাড়ির কেয়ারটেকার ও নিচতলার বাসিন্দা মিন্টু হাওলাদার, তার মেয়ে মারিয়া ইশরাত, স্যানিটারি মিস্ত্রি মনির হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, প্রতিবেশী আলী আকবর, বাচ্চু মিয়া ও সিরাজুল ইসলাম। তাদের কেউ শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ঝিল মসজিদের পাশে মোহনা টেইলার্স গলির একটি পাঁচ তলা ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ঘটে। সকালে বাসার বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিলেন বাসিন্দারা। তারা ধারণা করেন, গ্যাস সংযোগ পাইপের কোথাও ছিদ্র হয়েছে। সম্ভাব্য সেই স্থানটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চালান তারা। একপর্যায়ে সকাল ৮টার দিকে এক স্থানে গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালান মিন্টু হাওলাদার। তখন সেখানে আগুন ধরে যায় এবং বিস্ফোরণ ঘটে। এতে মিন্টু ও তার প্রতিবেশী বাচ্চু মিয়া দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে বার্ন ইন্সটিটিউটে নেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা স্যানিটারি মিস্ত্রি মনিরকে বাসায় ডেকে নেন। তিনি বাসার বাথরুম পরীক্ষা করে জানান, পয়োবর্জ্যের লাইনে গ্যাস জমে আছে। এরপর সেই গ্যাস বের করে দেওয়ার জন্য তিনি পয়ঃনিষ্কাশন পাইপের একটি ঢাকনা খুললে দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে তিনি, মিন্টু মেয়ে মারিয়া ও উপস্থিত প্রতিবেশীসহ অন্যরা দগ্ধ হন।
আহত মিন্টু হাসপাতালে জানান, বাসার বাথরুম ও রান্নাঘরে মাঝেমধ্যেই গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যেত। তবে কোথায় থেকে গ্যাস বের হয় তা খুঁজে পাননি। গতকাল তা খুঁজতে খুঁজতে রান্নাঘরে গেলে এ ঘটনা ঘটে।
মিন্টুর স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার জানান, সকালের ঘটনার পর সন্ধ্যায় গ্যাস লাইনের ছিদ্র মেরামতের জন্য স্যানিটারি মিস্ত্রিকে নিয়ে বাসায় যান। তখন সেখানে জমে থাকা গ্যাস আবার বিস্ফোরিত হয়।
বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানান, মিন্টুর শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। বাকিদের হাত-মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান দগ্ধ হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন জানান, আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। তবে তারা পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রাই আগুন নিভিয়ে ফেলেন। আহতদের তারাই উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।
শাহজাহানপুর থানার ওসি সুজিত কুমার সাহা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জমে থাকা গ্যাসের কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা তদন্ত করে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবেন। পাশাপাশি পুলিশও ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে। এক্ষেত্রে কারও গাফিলতি থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।