spot_img

অগ্নিকন্যার চির বিদায়

চির বিদায় নিলেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বর্ষীয়ান রাজনীতিক, সাবেক সংসদ উপনেতা, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। গতকাল বুধবার বেলা ১২টা ৫৭ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। মতিয়া চৌধুরীর মরদেহ এখন এভারকেয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। এর আগে গুলশান আজাদ মসজিদে জোহরের নামাজের পর তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বেগম মতিয়া চৌধুরী বেশ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। দুই মাস আগে মেরুদন্ডে আঘাত পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় তার। এক সপ্তাহে আগে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছিলেন। বুধবার সকালে ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে’ আক্রান্ত হন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তার ইসিজি করে সেবা দিতে শুরু করেন। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। বেলা ১২টা ৫৭ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শেরপুর-২ আসনের ছয়বারের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তাকে সংসদ উপনেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে মতিয়া চৌধুরীর জন্ম। তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। আর মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ১৯৬৪ সালে সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে মতিয়া চৌধুরী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
ইডেন কলেজে পড়ার সময় বাম ধারার ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন বেগম মতিয়া চৌধুরী। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়, তাতে মতিয়া চৌধুরী সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। আইয়ুব খানের আমলে চারবার কারাবরণ করেন। ১৯৬১-৬২ মেয়াদে তিনি ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি। ১৯৬৫ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার আন্দোলনে জোরালো ভ‚মিকা ছিল মতিয়া চৌধুরীর। আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্নিঝরা বক্তৃতার জন্য তাকে বলা হত ‘অগ্নিকন্যা’। মতিয়া চৌধুরী ১৯৬৭ সালে প‚র্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী গঠনে তিনি একজন সংগঠকের ভ‚মিকা পালন করেন। ১৯৭৯ সালে ন্যাপ ছেড়ে মতিয়া চৌধুরী যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৮৬ সালে দলের কৃষি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এক সময় তাকে দলের নীতি নির্ধারণী পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে মতিয়া চৌধুরীকে। জেল জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘দেয়াল দিয়ে ঘেরা’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে সারাজীবনই সাধারণ বেশভ‚ষা আর সাদামাটা জীবনযাপনের জন্য পরিচিত ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভ‚মিকার জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানস‚চক ফেলোশিপ দেয়।
শোক: বেগম মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাহবুবউল আলম হানিফ। এছাড়া শোক জানিয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল যৌথ বিবৃতিতে শোক জানান। বেগম মতিয়া চৌধুরীর ভাই মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এলাকার মানুষের দাবি থাকলেও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মতিয়া চৌধুরীর মরদেহ শেরপুরে তার নির্বাচনী এলাকায় নেওয়া হবে না।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ