চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় বরিশাল বোর্ডে ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ১৬৭ জন। মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় ফলাফলের পরিসংখ্যান ঘোষণা করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো.ইউনুস আলী সিদ্দিকী। তিনি জানান, এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬৬ হাজার ৮৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৩১ হাজার ৯৯৩ জন ও ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯৪ জন। পাস করেছে ৫৪ হাজার ৮৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৪ হাজার ৩৬৭ জন ও ছাত্রী ২৯ হাজার ৭২২ জন। বিভাগে পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে ঝালকাঠি জেলা। প্রতিবারের মতো এবারও এ শিক্ষা বোর্ডে ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা পাস ও জিপিএ’র হারে এগিয়ে। গত বছর বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৫। আর এবার জিপিএ-৫ বেড়েছে ১৭৪টি। এ বছর কোনো কলেজে শতভাগ ফেল না থাকলেও ২১টি প্রতিষ্ঠানে পাসের হার শতভাগ রয়েছে। তিনি আরো জানান, ভালো ফলাফলের কৃতিত্ব ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের। শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রম, শিক্ষকদের সঠিক দিক নির্দেশনা এবং অভিভাবকদের সঠিক সমর্থনেই এই সাফল্য এসেছে।
শীর্ষে ঝালকাঠি জেলা ও বিজ্ঞান বিভাগ \ এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হারে সবার শীর্ষে রয়েছে ঝালকাঠি জেলা। এ জেলায় মোট পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানান, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভোলা জেলার পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩৬। আর গতবছর দ্বিতীয় স্থানে থাকা বরিশাল জেলা ৮৩ দশমিক ৯৪ পাসের হার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে এবারে। এছাড়া চতুর্থ অবস্থানে থাকা পিরোজপুর জেলার পাসের হার ৮২ দশমিক ৯৪। পঞ্চম অবস্থানে থাকা বরগুনা জেলার পাসের হার ৭৯ দশমিক ০২। আর সবার শেষে থাকা পটুুয়াখালী জেলার পাসের হার ৭৪ দশমিক ৮২। তবে বিগত বছরের থেকে এবারে সব জেলায় গড় পাসের হারের বৃদ্ধি পেয়েছে।
অপরদিকে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাসের হার সবথেকে বেশি। এ বিভাগে পাসের হার ৯২ দশমিক ৫১। এরপর মানবিক পাসের হার ৭৯ দশমিক ১৮ ও ব্যবসায়ী বিভাগে পাসের হার ৭৭ দশমিক ২০। এছাড়া জিপিএ-৫ সবচেয়ে বেশিও পেয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগে মোট ২ হাজার ২৯২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর মানবিক বিভাগ থেকে ১ হাজার ৫৮২ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২৯৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
শতভাগ পাস ২১ কলেজ \ এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ২১টি কলেজে সবাই শতভাগ পাস করেছে। বোর্ডের ৩৪২ টি কলেজের ৬৬ হাজার ৮৭ শিক্ষার্থীরা ১৩৭ টি কেন্দ্রে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে ২১টি কলেজের সকল শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর এরমধ্যে সর্বোচ্চ ঝালকাঠি জেলায় ৭ টি, বরিশাল জেলায় ৫ টি, ভোলা জেলায় ৪ টি ও পটুয়াখালী জেলায় ৩টি করে কলেজে সবাই শতভাগ পাস করেছে। বাকী দুটি জেলায় ১টি করে কলেজে পরীক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে।
এছাড়া ৫০ শতাংশের ওপরে শতভাগের নিচে পরীক্ষার্থী পাস করেছে ২৮৮টি কলেজের এবং ৫০ শতাংশের নিচে পরীক্ষার্থী পাস করেছে ৩০টি কলেজে। যার মধ্যে ২০ শতাংশের নিচে ২টি এবং ১৫ শতাংশের নিচে একটি কলেজে পাস করেছে। তবে এ বোর্ডে এবারেও এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে একজনও পাস করেননি।
এ বছরেও মেয়েরা এগিয়ে \ এ বছরেও এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা গতবছরের চেয়ে বেড়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানান, ২০২৩ সালে যেখানে গড় পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৫, সেখানে এবারে গড় পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৫।
বরিশাল ক্যাডেট কলেজের সকলেই জিপিএ-৫ \ বরিশাল ক্যাডেট কলেজের প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও বোর্ডের শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। এবছর ৪৮ জন ক্যাডেট কলেজ থেকে অংশগ্রহন করে সকলেই জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন বলে জানান, কলেজ অধ্যক্ষ লে. কর্নেল রাইহান আহমেদ।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর অরুণ কুমার গাইন বলেন, হিসেবে বিগত দিনের থেকে ফলাফল অনেক ভালো হয়েছে এবার। আর এজন্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি জানান, গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলো ৪ হাজার ১৬৭ জন, আর এবারে পেয়েছে ৪ হাজার ১৬৭ জনে। যা গত বছরের থেকে প্রায় দুইশতটি বেশি। তিনি আরো জানান, বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় এবারেও ছেলেদের থেকে মেয়েরা ভালো ফলাফল করেছে। যেখানে পাস হারের ব্যবধান ১১ দশমিক দুই শতাংশ। তবে তুলনামূলকভাবে গতবারের থেকে এবারে ছেলেরা কিছুটা ভালো করেছেন। গত বছরে ছেলেদের পাশের হার ৭৫ দশমিক ৪৬ ছিল সেখানে এবারে পাশের হার ৭৬ দশমিক ১৬। এদিকে ফলাফল ও জিপিএ-৫ এর দিক থেকে এবারেও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছে। এ বছর বিজ্ঞান থেকে মোট ২ হাজার ২৯২ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৪৩ জন মেয়ে পেয়েছে জিপিএ-৫। এছাড়া মাত্র ৯৪৯ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
অপরদিকে মানবিক বিভাগ থেকে মোট ১ হাজার ৫৮২ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ২৮১ জন মেয়ে এবং মাত্র ৩০১ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২৯৩ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যার মধ্যে ১৮০ জন মেয়ে এবং ১১৩ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এদিকে তিন বিভাগে পাসের হার মিলিয়ে দেখা যায় মেয়েরা ৮৭ দশমিক ১৮ শতাংশ পাস করেছে, যেখানে ছেলেদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ১৬। আর সংখ্যায় হিসেব কষলে ২৯ হাজার ৭২২ জন মেয়ে এবং ২৪ হাজার ৩৬৭ জন ছেলে পাস করেছে।
উল্লেখ্য এ বছর ১৩৭টি কেন্দ্রে ৩৪২টি কলেজের ৬৭ হাজার ১১৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশগ্রহণ করে ৬৬ হাজার ৮৭ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৫৪ হাজার ৮৯ জন। আর মোট কলেজের মধ্যে ২১টি শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে, তবে কোন কলেজ নেই যেখানে কেউ পাস করেনি। এছাড়া এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬ জন মেয়ে ও ২৭ জন ছেলে পরীক্ষার্থী বিভিন্ন সময়ে অসদুপায় অবলম্বন করায় বহিষ্কার হয়েছে।