spot_img

৫০ দিনে ৩০ খুন, রাজধানীতে রাতে পুলিশের টহলে নিষ্ক্রিয়

পুলিশ কাজে ফিরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দিনের বেলায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পয়েন্টে পুলিশ দেখা মিললেও রাতে তেমনটি নয়। রাত ১০ টার পর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে টহল পুলিশ দেখা যায় না। একারণে প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে অপরাধের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই ঘটছে খুনখারাবি, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতির মতো ঘটনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও গাড়ি সঙ্কটে আগের মতো টহল দিতে পারছে না, অপারেশনাল কার্যক্রমও সেভাবে শুরু হয়নি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সাড়ে ৪’শ এর বেশি থানায় হামলা অস্ত্র লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। চলমান ঘটনায় ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। আহত হন তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য। ৬ আগষ্ট থেকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি পালন করে। ২০ আগষ্ট থেকে পুলিশ যোগদান করে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে। এরই প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে সব ধরনের অপরাধ। প্রতিদিনই ঘটছে খুনখারাবি, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতির মতো ঘটনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তাদের মানসিক পরিস্থিতির পূর্বের অবস্থায় ফিরতে অনেক সময় লাগবে। এরই মধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসি, এডিসি ও এসি’রা প্রতিদিন থানায় থানায় গিয়ে ওসি থেকে শুরু করে কনষ্টেবলদের মধ্যে ডিউটিতে মনোনিবেশ করতে উদ্বুদ্ধকরণ করছেন। প্রতিটি জেলায় এরকমই কাজ করছে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে লে. কর্নেল/মেজর পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তারাও থানায় যাচ্ছেন।
পুলিশের অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ভ‚মিকার কারণে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও খুনোখুনি ঘটছে। ৬ আগষ্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে সহ¯্রাধিক। এর প্রায় ৯৫ ভাগ ঘটনায় থানা পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। কয়েকটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন শাখার উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, রাতে পুলিশের টহল ডিউটি চলছে। তবে দিন দিন এটা কার্যকরি করতে এখন টহল ডিউটিতে ডিসি থেকে এসি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা থাকছেন। আগের চেয়ে পুলিশ আন্তরিকতার সাথে ডিউটি করছে। থানায় থানায় কর্মকর্তারাও যাচ্ছেন। তারা পুলিশ সদস্যদেরকে বিভিন্ন ধরনের মোটিভেশনাল দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।
৫০ দিনে ৩০ খুন ঃ
ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র আরো জানায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজার সাদিক খান আড়তের সামনে নাসির ও মুন্নাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পূর্ব শত্রæতা জেরে এই হত্যাকাÐ সংগঠিত হয়েছে। সম্প্রতি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া এক শীর্ষ সন্ত্রাসী এর নেপথ্যে রয়েছে বলে পুলিশের ওই সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে বারোটার দিকে মহাখালী সাততলা বস্তিতে মধু ভান্ডারী নামে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মহাখালীতে নেশার টাকা না দেওয়ায় মশিউর রহমান (৪৫) নামে এক ব্যক্তি আপন ছোট ভাইয়ের হাতে খুন হন। অভিযুক্ত ভাইয়ের নাম শেখ ফরিদ হোসেন ভ‚ঁইয়া ওরফে বাবু। একইদিন রাতে বিমানবন্দরের কাওলা রেলগেট এলাকায় অজ্ঞাত এক কিশোরের লাশ পাওয়া যায়। তার মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছিল। গত ২১ সেপ্টেম্বর সূত্রাপুরের লোহারগেট এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে জিন্নাহ নামে এক অটোরিকশা চালক খুন হয়। ২০ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নাসির বিশ্বাস নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একইদিন খিলগাঁও তালতলা ঝিলপাড়ের ঝোপ থেকে নুর ইসলাম নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
১৮ সেপ্টম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। যা নিয়ে দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর মেরুল বাড্ডায় স্বামীর ছুরিকাঘাতে বিথী আক্তার নামে এক গৃহবধূ খুন হন। ১৩ সেপ্টেম্বর মুগদার মান্ডায় দুই দোকানের মালামাল বিক্রি নিয়ে মারামারিতে এলাহি শাকিল নামে একজন নিহত হন। একইদিন যাত্রাবাড়ীতে আশরাফ আলী নামে এক ট্রাফিক কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ীতে চোর সন্দেহে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
৬ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাসা থেকে বোরহান উদ্দিন সাইমন নামে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, তাকে খুন করা হয়েছে। একই দিন আদাবর থানার শনিরবিল এলাকায় রাতে তুহিন নামে এক বিকাশকর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। ৪ সেপ্টেম্বর সকালে মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় রইচ বেপারী নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ওইদিন রাতে ওয়ারী এলাকা থেকে ২৫ বছর বয়সি এক তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩ সেপ্টেম্বর রাত ৩টার দিকে কদমতলী মেরাজনগর কাঁচারাস্তার ওপর ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মো. হাশেম নামে এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী খুন হন। ৩০ আগস্ট হাজারীবাগে খুন হন ইফতেখার হোসাইন ইমন নামে এক তরুণ। একই দিন বনশ্রী এলাকায় নড়াই নদী থেকে মাহফুজুর রহমান বিপ্লব নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর একদিন আগে তিনি নিখোঁজ হন। ৩১ আগস্ট ভোরে বাসাবো ফ্লাইওভারের ঢালে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন অটোরিকশাচালক মো. ইউসুফ। একই দিন কদমতলীর মিনারবাগ থেকে মাহবুব নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
২৭ আগস্ট ভোরে মিরপুরের দারুসসালাম সড়কে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন সফটওয়্যার প্রকৌশলী প্রীতম। একই দিন যাত্রাবাড়ীতে বাসায় ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সীমা আক্তার (২২) নামে অন্তঃসত্ত¡া এক নারীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
রাতের জনশূন্য এলাকায় ছিনতাই ঃ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রাত ১০ টার পর রাজধানীর অনেকটা জনশূন্য বা নিরিবিলি পরিবেশ যেসব এলাকায় বিরাজ করে, সেসব এলাকায় পথচারীদের ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এসব জায়গার মধ্যে ছিনতাইয়ের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শাহবাগ মোড় থেকে সায়েন্সল্যাবরেটরি মোড়, মতিঝিল শাপলা চত্ত¡র থেকে ফকিরাপুল মোড় হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে খিলগাঁও ফ্লাইওভার পর্যন্ত, শ্যামলী ক্রসিং থেকে আদাবর রিং রোড হয়ে শিয়া মসজিদ হয়ে বছিলা পর্যন্ত, রামপুরা টিভি সেন্টার ব্রিজ থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার রোড, এফডিসি ক্রসিং থেকে মহাখালী ও গুলশান লিংক রোড পর্যন্ত, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচক্কর থেকে মিরপুর-১, মিরপুর-২ এবং রূপনগর মিল্কভিটা সড়ক পর্যন্ত, উত্তরা আব্দুল্লাহপুর থেকে উত্তরা-১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর সেক্টর এলাকার সড়ক এবং যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে কাজলা, কুতুবখালী, শ্যামপুর, জুরাইন এলাকাগুলো রাতের বেলায় ছিনতাই প্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, উত্তেজিত জনতার আক্রমণের পর থানাগুলোর কার্যক্রম প্রায় অকার্যকর ছিল। পুলিশের টহল গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয়ায় সেই অর্থে টহল কার্যক্রমও শুরু করা যায়নি। তবে দ্রæতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চলছে।
ডিএমপির একাধিক থানার ওসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে আগের চেয়ে কিছুটা খারাপ হয়েছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। পুলিশের ভেতর এখনো আতঙ্ক রয়েছে। তা ছাড়া সব থানাতেই স¤প্রতি তাদের পদায়ন হয়েছে। এখনো এলাকা হিসেবে সবকিছু বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। সময়ের সঙ্গে অপরাধ কমে আসবে বলে জানান তারা।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ