সরকারি-বেসরকারি স্কুলগুলোতে গত কয়েকবছর ধরে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় এবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে, পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ দাবি পর্যালোচনা করে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আগ্রহে আগের মতো লটারির সিদ্ধান্তই বহাল রাখছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভর্তি নীতিমালা সংশোধনের জন্য অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সভায় অংশ নেওয়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সভাসূত্রে জানা গেছে, লটারি নাকি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করা হবে, সভায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এবারও লটারি পদ্ধতি রাখার পক্ষে মতামত দেন অধিকাংশ সদস্য। ফলে লটারি পদ্ধতিতে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষা উপদেষ্টাকে অবগত করা হবে। তিনি চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে নীতিমালা আকারে তা প্রকাশ করা হবে। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, ঢাকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আগ্রহে এবারও লটারি পদ্ধতি বহাল রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সভায় অংশ নেওয়া ঢাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে কয়জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন, তারা সবাই পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির পক্ষে মতামত দেন। তবে শিক্ষা প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কমিটিতে বেশি। তাদের অধিকাংশই লটারি বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। ফলে লটারির মাধ্যমে ভর্তির সিদ্ধান্তই বহাল থেকেছে। তিনি ইত্তেফাককে বলেন, আমরা মনে করি, ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো উচিত নয়। প্রাথমিক স্তরে অর্থাৎ, প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণিতে এটা ঠিক আছে। তার ওপরের ক্লাসে অবশ্যই মূল্যায়ন বা পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির নিয়ম থাকা উচিত। আশা করি, আগামী বছর সেটি বাস্তবায়ন হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকাসহ দেশের অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো লটারির মাধ্যমে ভর্তি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তারা নানা যুক্তিও তুলে ধরছেন। সেগুলো নিয়ে সভায় দীর্ঘসময় আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতামত ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ করবো। তিনি সম্মতি দিলেই এ বিষয়ে চ‚ড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৬৫৮টি সরকারি বিদ্যালয়ে শূন্য আসন ছিল এক লাখ ১৮ হাজার ১০১টি। বিপরীতে আবেদন করেছিল ৫ লাখ ৬৩ হাজার ১৩ জন। অন্যদিকে তিন হাজার ১৮৮টি বেসরকারি বিদ্যালয়ে শূন্য আসন ছিল ১০ লাখ তিন হাজার ৯৯৩টি। বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে তিন লাখ ১০ হাজার ৭৭৯টি। তবে এবার কিছু আসন বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে মাউশি সূত্র।