রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হোমিসাইডাল বা হত্যাকাÐ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্নস্থানে অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্র্ট অনুযায়ি তিনি মাথায় আঘাতের কারণে ‘অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ’ ও ‘ব্রেন ড্যামেজ’ হয়ে মারা গেছেন। মাথার পেছনে ও কানের ওপরে আঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আড়াই মাস পর পাওয়া ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক এসব কারণ উল্লেখ করেছেন।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবু সাঈদের কানের ওপরের দিকে মাথার খুলিতে দৈর্ঘ্যে ৩ ইঞ্চি ও প্রস্থে দেড় ইঞ্চি আয়তনের গর্ত ছিল, যেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। এছাড়া বুক, পেট, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছোট ছোট ছররা গুলি’র (স্মল পিলেট) চিহ্ন ছিল। সেখান থেকেও রক্তক্ষরণ হয়েছে। মাথার আঘাত, শরীরের রক্তক্ষরণের কারণে আবু সাঈদের শরীরের রক্ত জমাট বেঁধে যায়। এতে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
গত সোমবার রাতে গণমাধ্যমের হাতে আসা আবু সাঈদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। গত ১৬ জুলাই রাত ১১টা ৫০ মিনিটে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবু সাঈদের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এটিকে হোমিসাইডাল ডেড বা হত্যাকান্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্যানেল আইনজীবী রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, মাথার আঘাতের চিহ্ন সুস্পষ্ট। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছররা গুলির চিহ্ন। সবকিছু মিলে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রমাণ করে, এটি হত্যাকাÐ। এ হত্যাকাÐের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কেউ ছাড়া পাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী আবু সাঈদের মাথায় আঘাতে একটি বড় ক্ষত (গর্ত) হয়েছিল। বুলেটের আঘাতে মৃত্যু হলে বুলেট তার মাথার এক পাশে লেগে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যেত। যেহেতু এমনটি ময়নাতদন্তে উল্লেখ নেই, তাই এটি কোনো ঢিলের আঘাতে হতে পারে। এ ব্যাপারে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট রংপুর মেট্রোপলিটন আমলি আদালতে হত্যা মামলা করেন তার বড় ভাই রমজান আলী। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলায় পুলিশ সদস্য এএসআই মো. আমীর আলী ও সুজন চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রংপুরে আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায়
বেরোবির তদন্ত কমিটি গঠন
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় বেরোবির তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়িতদের (শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী) চিহ্নিতকরণ ও শাস্তির ধরন নির্ধারণ করবে। কমিটিতে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান আহŸায়ক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আমির শরীফ সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।