বাংলাদেশের ব্যাংকখাত সংস্কার, অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ ও কর সংস্কারসহ উদ্বেগের মূল ক্ষেত্রগুলোতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়েছে ব্যাংক খাত সংস্কার, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, কর ব্যবস্থাপনা, আয়কর ও ভ্যাট সংস্কারের জন্য। শুধু আইএমএফ নয়, অন্যদের কাছেও সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আইএমএফ-এর কাছ থেকে যে বাড়তি ঋণ নেওয়া হবে, তা সংস্কারের কাজে ব্যবহার করা হবে। তবে আইএমএফের কাছে কত ঋণ চাওয়া হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। অন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো কী পরিমাণ সহায়তা দেবে, সেটা জানার পর আইএমএফকে সহায়তার অঙ্ক জানানো হবে। গতকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বরর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, তবে তা পুরোপুরি বাস্তবায়নে সময়ের প্রয়োজন হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা রকম সংস্কার ও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সম্পদ দরকার। আমরা যতটুকু পারি দেশীয় সম্পদ আহরণ করব। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি সহায়তা লাগবে। যেসব ক্ষেত্রে বিদেশি সহায়তা লাগবে, তার মধ্যে অন্যতম হলো বাজেট সহায়তা। এ ছাড়া সংস্কারের বিষয়ে সরকার মোটামুটি পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংক খাতসহ অন্যান্য খাতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে, যদিও এ ক্ষেত্রে কিছু সময় লাগবে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সম্পদের ঘাটতি কতটা আছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরও বিশদ আলোচনা হবে। নীতি ও মূল উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা করবে। বিদেশি মুদ্রার বাজার ও ব্যাংক খাত সংস্কারে কী করতে হবে, সেটাও জানাবে আইএমএফ। তারা এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করবে। বিশদ আলাপ করে তারা নিজস্ব চিন্তার বিষয়ে জানাবে। তারপর অক্টোবর মাসে আমরা বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় যাব, সেখানে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা হবে। বর্তমান ঋণ কর্মসূচি নিয়েও আলাপ হবে। ভবিষ্যতের জন্যও আমরা কিছু অনুরোধ করেছি।
উল্লেখ্য, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং অতিরিক্ত তহবিল, সম্ভাব্য সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য এক সপ্তাহব্যাপী সফরে এসেছে আইএমএফ মিশন চিফ ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি। এসময় তারা সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করবেন। আইএমএফ প্রতিনিধি দলের এই সফরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জোরদার এবং সামগ্রিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপর আলোচনা করবে। প্রতিনিধি দল উচ্চ ভর্তুকি ব্যয়, ক্রমবর্ধমান মুল্যস্ফীতির চাপ ও সরকারি ব্যয়ে সম্ভাব্য হ্রাসের খাতগুলোসহ দেশের আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা করবে বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।