নিউমার্কেট থানায় করা ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিশনাল ডিআইজি) মশিউর রহমানের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন গতকাল শুক্রবার বিকালে এ আদেশ দেন। গ্রেপ্তার অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মশিউর রহমানকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে আসামিপক্ষ থেকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর রহমানকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
মশিউর রহমান ২০০৮ সালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে সহকারী কমিশনার হিসাবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি ডিবিতে এডিসি ও ডিসি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৬ সালে এডিসি অবস্থায় তাকে সচিবালয়ে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। বছরখানেক সেখানে থাকার পর আবারও ডিবিতে চলে আসেন। সর্বশেষ তিনি ডিবির উত্তরা বিভাগ ও লালবাগ বিভাগের উপকমিশনা (ডিসি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ৫ আগষ্টের আগে তিনি এডিশনাল ডিআইজি হিসাবে পদোন্নতি পান। এরপর ৫ আগষ্টের পর তাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়।
ডিএমপি সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রাণহানির ঘটনায় মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে আটটি হত্যা মামলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ডিবি মশিউরকে সকলে জাল টাকা আবিষ্কারের কারিগর বলেই চিনতো। প্রতি বছর ঈদের সময় নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লোককে ধরে এনে জাল টাকার নাটক সাজাতেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে প্রশ্ন করলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করতেন এই মশিউর।
গত মে মাসে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জাল করে বিক্রি করা চক্রের প্রধান হোতা সিনিয়র সিস্টেম এ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি আদায় করেন। ভিডিও ফুটেজে দৈনিক সমকালের সাব্বির নেওয়াজ, দৈনিক ইত্তেফাকের নিজামুল হক, মাছরাঙা টেলিভিশনের মাহমুদ সোহেল ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আবু জাফর সূর্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়।
সর্বশেষ জুলাই মাসে যাত্রাবাড়ীতে এক আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীর কাছে ছাত্র-জনতা অস্ত্র পায়। এ ঘটনায় ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অফ আইটির শিক্ষার্থী মাসরুর হাসানকে ডিবি দিয়ে গত ২৫ জুলাই তার ডেমরার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান মশিউর। পরে তাকে ডিবিতে আটকে রাখে ১ আগস্ট পর্যন্ত। এ নিয়ে তার বাবা ছেলের সন্ধান চাইতে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করতে যান। কিন্তু মশিউরের টিমের সদস্যরা মাসরুরের বাবা ও ভাইকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে থেকে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তাদের তুলে নিয়ে যান। সাত দিন আটকে রাখার পর তাকে এবং তার বাবা, ভাই এবং মামাকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।