পর্যটন শিল্পে গতি ফেরাতে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী ১১তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার ২০২৪। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এ মেলার উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আফতাব হোসাইন প্রামাণিক। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য ‘খুলবে পর্যটনের দুয়ার- এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার’। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওপেং, বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাতেমা রহিম ভিনা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল অসান জুনিয়র, মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনীন রাশেদ, ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের ডিআইজি মো. আবু কালাম সিদ্দিক। স্বাগত বক্তব্য দেন পর্যটন বিচিত্রার সম্পাদক ও এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলাল।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি একেএম আফতাব হোসাইন প্রামাণিক বলেন, ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে একটি দেশের রাজনৈতিক, কালচারাল ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রয়োজন আছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে দেশের টেকসই উন্নয়ণ করা সম্ভব। আমি পর্যটন খাতে ইনভেস্টমেন্ট করার জন্য সবাইকে আহŸান জানাচ্ছি। ট্যুরিজম একটি ভালো ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্র।
তিনি বলেন, পৃথিবী সব দেশ যেহেতু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের জন্য পর্যটনের বিষয়ে বিভিন্ন দেশ জোর দিচ্ছে। তাই আমাদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনকে আরও বেশি টেকসই করতে আমাদেরও পর্যটনে খাতে ওপর জোর দিতে হবে।
লি শাওপেং বলেন, আমরা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের চায়নার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এই এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার বাংলাদেশের এবং চায়নার সম্পর্কের মধ্যে এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করবে পর্যটনশিল্পে। এই ফেয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চায়নার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো আদান-প্রদান হবে।
মো. আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, পর্যটনশিল্প বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত। এর মাধ্যমে অনেক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যেমন হয় একইভাবে আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরা যাবে। আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ হচ্ছে ডেডিকেটেডলি আমাদের পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া। পাশাপাশি এমন পরিবেশ তৈরি করা যেখানে পর্যটকরা নিরাপদ মনে করবে। কোনো ট্যুরিস্ট যদি কোনো ঝামেলায় পড়ে বা তাদের সাহায্যের প্রয়োজন পরে তারা চাইলে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে যেকোনো সময়। এজন্য আমরা কিছু হটলাইন সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছি।
শিউনীন রাশেদ বলেন, এবারের এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারে মালদ্বীপের অনেক প্রতিষ্ঠান যোগ হয়েছে। এই মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের জনগণের মধ্যে এক প্রকার নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠবে। মালদ্বীপ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় পর্যটন খরচ অনেক কম। তাই আমি আহŸান জানাবো পর্যটকদের মালদ্বীপে আসার জন্য।
লিও টিটো এল অসান জুনিয়র বলেন, আমি বাংলাদেশে মানুষকে ফিলিপানের ঐতিহাসিক সব স্থানগুলোতে ভ্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমাদের দেশে সমুদ্র, পাহাড় থেকে শুরু করে অনেক আকর্ষণীয় পর্যটন স্পষ্ট আছে। আমরা মনে করি, পর্যটন শিল্প মানুষের মধ্যে যেমন সম্পর্ক স্থাপন করে একইভাবে এটি অর্থনীতিকেও অনেক বেশি শক্তিশালী করে।
ফাতেমা রহিম ভিনা বলেন, বাংলাদেশ এক অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। আমাদের বিশাল সুন্দরবনসহ যেসব পর্যটনকেন্দ্রগুলো আছে যা বিশ্বের অনেক পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এবারের মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে পর্যটনের এক অপার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, পর্যটন শিল্পে গতি ফেরাতে বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণকে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় করা এবং আঞ্চলিক পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সেতুবন্ধন করাই এই মেলা আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
মেলায় রয়েছে আসন্ন পর্যটন মৌসুমে দেশ-বিদেশে বেড়ানোর বিভিন্ন আকর্ষণীয় ভ্রমণ অফার, হোটেল, রিসোর্ট বা প্যাকেজ বুকিংসহ বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজলাইন্স, এয়ারলাইন্স, টার অপারেটর ও থিমপার্কসহ বিনোদনের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া বৈচিত্র্যময় এ আয়োজনে থাকছে সেমিনার, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) মিটিং। মেলার প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে চায়না, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মেলার প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা, প্রবেশ কুপনের বিপরীতে র্যাফেল ড্র বিজয়ীদের জন্য থাকবে এয়ারলাইন্স টিকিটসহ বেড়ানোর আকর্ষণীয় গিফট ভাউচার।
মেলার টাইটেল স্পন্সর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, প্রাইম পার্টনার কান্ট্রি-মালদ্বীপ, হোস্ট কান্ট্রি বাংলাদেশ, হসপিটালিটি পার্টনার-ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা। ব্যাংক পার্টনার-মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, রিসোর্ট পার্টনার- ছুটি গ্রæপ, ট্রান্সপোর্ট পার্টনার- কনভয় সার্ভিস, কানেকটিভিটি পার্টনার- এডিএন টেলিকম, ক্রুজ পার্টনার- ঢাকা ডিনার ক্রুজ।
মেলার সাপোর্টিং অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে রয়েছে- ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আউট বাউন্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন, ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অ্যাসোসিয়েশন।