spot_img

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে ২শ কোটি টাকার দুর্নীতি

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন ও তার ছোট ভাইদের মাধ্যমে নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, মানি লন্ডারিং ও অন্যান্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। মাত্র আড়াই বছরেই তিনি শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। এসব অভিযোগ তদন্ত করে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে গত ১২ আগষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এরপরই এই অধিদপ্তরের কতিপয় প্রভাবশালী অসাধু কর্মকর্তা ডিজির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় ফায়ার ফাইটার আব্দুল হান্নানকে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে মঙ্গলবার বিকালে পুরান ঢাকায় ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে যোগ দিতে গেলে ডিবি পুলিশের হাতে হান্নানকে তুলে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর খোঁজে এসে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন হান্নানের স্ত্রী ফাতেমা খন্দকার নওরিন।
তিনি বলেন, আমার স্বামী আব্দুল হান্নান ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে এসেছিল। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। গত রাত ১১টার দিকে হান্নান আমাকে ফোন করে জানিয়েছে, আমি ডিবিতে আছি। পরে বুধবার সকালে ডিবিতে আসার পর জানায় তারা কেউ হান্নানকে আটক করেনি। হান্নানের অপরাধ সে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিনের ২০০ কোটি টাকা দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছে।
নওরিন আরও বলেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমার স্বামীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরে আবার আমার স্বামীকে বলেছে, সদর দপ্তরে এসে আবেদন দিতে। তাকে সদর দপ্তর থেকে বের হওয়ার পর ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়েছে।
এদিকে ফায়ার ফাইটার আব্দুল হান্নানের সন্ধানে তার আরেক সহকর্মী ডিবি কার্যালয়ের সামনে আসেন। ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ পরিদর্শক রেজায়ে রাব্বি নিজেও হয়রানির শিকার দাবি করে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের দুই ভাই আনিস ও সালাউদ্দিন সারা দেশে ঘুরে ঘুরে বদলি ও টেন্ডার বাণিজ্য এবং মালামাল কেনায় নানা অনিয়ম করে আসছেন। এই সিন্ডিকেটকে টাকা না দিলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বারবার বদলি করা হয়। টাকা না দেওয়ায় আমাকে গত দুই বছর ১০ মাসের মধ্যে পাঁচ বার বদলি করা হয়। এমন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে পাইনি। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন দিলে আমাকে হয়রানি না করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেটিও মানা হয়নি। আমি হয়রানি বন্ধে আদালতেও রিট করেছি। এই রিট চলমান রয়েছে। ডিজির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ যারা করেছেন, তাদের সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে রিসিভ করেননি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডিজির বিরুদ্ধে দুই শত কোটি টাকার দুর্নীতির বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে তার দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর তদন্ত কাজ কি পর্যায়ে রয়েছে-তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ডিজির বিরুদ্ধে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলিতে অনিয়ম এবং ফায়ার সার্ভিসের টেন্ডার বানিজ্যে ২শ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ১২ আগষ্ট স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে।
দুই শত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ঃ
২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করার পর ফায়ার ফাইটার ও গাড়ি চালক পদে আটশ’ জন নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগে তার আপন ছোট ভাই নূর উদ্দিন আনিস, সালাউদ্দিন ও তাদের সিন্ডিকেট সদস্য ৩৫০ জনের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে নিয়োগের তদবির করেছেন। এই দুই পদে নিয়োগে মহাপরিচালক ও তার ভাইগণের সিন্ডিকেট দ্বারা প্রায় ৭০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
ডিজির ছোট ভাই নূর উদ্দিন আনিস ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ফায়ার সেফটি প্ল্যান কনসালটেন্সি ফার্মসমূহের মধ্যে ১০টি কনসালটেন্সি ফার্মের সাথে ৩শ টাকার ষ্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে পার্টনারশিপ রয়েছে। আনিসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির নাম ভিস্তা (বিডি) ইঞ্জিনিয়ারিং। তার প্রতিষ্ঠানটিসহ ১০ টি ফার্মের মাধ্যমে সকল সেফটি প্ল্যান পাশ হয়ে থাকে। তার ভাইয়ের পার্টনারশিপ কনসালটেন্সি ফার্মসমূহ ব্যতীত অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে সেফটি প্ল্যান জমা দিলে, সেটি বেশি সময় ধরে ফাইল বন্দী করে রাখা হয়। প্রতিটি প্ল্যান পাশ করতে ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা নেয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিসের সবচেয়ে বড় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফন ইন্টারন্যাশনালের লিয়াজো অফিসের সাথে নূর উদ্দিন আনিস পার্টনারশিপ ব্যবসা রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গত আড়াই বছরে এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৫০০ কোটি টাকার গাড়ি, মোটরসাইকেল, টার্ণ লেডার, ¯েœ্যারিক্যাল, ফোম কেমিকেল ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। এসব টেন্ডারবাজির পুরোটাই নিয়ন্ত্রন করেছেন নূর উদ্দিন আনিস।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ