সরকারের আশ্বাসে বৃস্পতিবার থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের সব পোশাক কারখানা। সাভারের আশুলিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী বিসিক, ভোগরা বাইপাস, বাঘের বাজার ও মাওনা এলাকায় কারখানায় নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। এসব এলাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা জোরদারে মোড়ে মোড়ে বিজিবি, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল দিয়েছেন। তবে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে সন্দেহভাজন ১৪ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।
কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজধানীর উত্তরায় নিজস্ব ভবনে বৃস্পতিবার বৈঠকে বসেন বিজিএমইএ নেতারা। এতে সংগঠনের সাবেক ছয় সভাপতি, সেনাবাহিনী, পুলিশ, শিল্প পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি অংশ নেন। বৈঠকে যৌথবাহিনী বিশৃঙ্খলা রোধে কঠোর অবস্থানের আশ্বাস দিলে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসায়ী নেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল ঢাকার শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে সন্দেহভাজন ১৪ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আশুলিয়া থেকে আটককৃতরা হলেন, নেত্রকোনা জেলার সদর থানার চকপাড়া গ্রামের মো. ইসমাইল (২৪), একই জেলার বেলবো থানার মো. আলম (২৪), টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার কোদালিয়া গ্রামের ফরহাদ মিয়া (২৪), দিনাজপুর জেলার বিরল থানার আজিদপুর গ্রামের মনির হোসেন (২১), ময়মনসিংহ জেলার মোস্তাফিজুর রহমান জুলহাস (১৭), আশুলিয়ার গোরাট এলাকার মো. শাকিল (২৩), ঘোষবাগ এলাকার আসমা আক্তার (২৮), নিশ্চিন্তপুর এলাকার শিমু আক্তার, একই এলাকার কুলসুম বেগম, আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকার মোখলেছুর রহমান (৫০) ও আবু হানিফ মিয়া (৪৭)। এছাড়া সাভার থেকে আরও তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের নাম-ঠিকানা জানা যায়নি।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ জানান, শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা তৈরির পাশাপাশি পোশাক কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত এমন সন্দেহভাজন ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
এর মধ্যে ১১ জনকে আশুলিয়া থেকে ও তিনজনকে সাভার এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। এসব বিশৃঙ্খলার সঙ্গে আটকদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শ্রমিক ঐক্যের সংবাদ সম্মেলন: গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় শ্রমিক ঐক্যের সভাপতি এম এ ফয়েজ বলেন প্রায় শতভাগ পোশাক কারখানায় বেতন-ভাতার কোনো সমস্যা নেই।
একের পর এক পোশাক কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা। এরই মধ্যে আশুলিয়া-সাভার-গাজীপুরের প্রায় দুই শতাধিক কারখানায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু কারখানা শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত আন্দোলনে বন্ধ হলেও বেশির ভাগ কারখানা পরিকল্পিতভাবে দুষ্কৃতকারীদের হামলা-ভঙচুরের কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের শিল্পখাত ধ্বংস করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা উঠেপড়ে লেগেছে।
এসময় তিনি পোশাক শিল্প রক্ষায় সাভার, আশুলিয়া, মিরপুর, ইপিজেডসহ দেশের সব পোশাক শিল্প এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সেনাবাহিনীকে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আহŸান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে কারখানাগুলোতে চাকরির দাবিতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষদের পাঠিয়ে ‘চাকরি চাই’ ¯েøাগান দিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। প্রকৃত গার্মেন্টস শ্রমিকরা কোনোভাবেই এ হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। শ্রমিকরা কখনো তাদের কারখানা বন্ধ হোক তা চায় না। আমরা অবিলম্বে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের পেছনে যারা কলকাঠি নাড়ছে এবং যারা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।