স্বাধীন মিডিয়া সংস্থা দৃক। ‘দৃক’ একটি সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ দৃষ্টি। ১৯৮৯ সালে আলোকচিত্রী ও নাগরিক অধিকার কর্মী শহিদুল আলম ও সমমনা কয়েকজনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় দৃক পিকচার লাইব্রেরি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে দৃক এখন ৩৫ বছরের পূর্ণ যুবক। ক্যামেরার মাধ্যমে নিজেদের ছবি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া এবং বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা ছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক উদ্দেশ্য। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কাজের সঙ্গেও যুক্ত হয়। এ ছাড়াও ভিডিও নির্মাণ, মুদ্রণ, উৎপাদন এবং প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করে আসছে দৃক। বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা তৈরি, সামাজিক অসাম্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধেও সোচ্চার থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পান্থপথে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কার্যালয় দৃকপাঠ ভবনের অষ্টম তলায় দৃক পিকচার লাইব্রেরির আয়োজনে প্রতি বছরের মতো এবারও পথিকৃৎ আলোকচিত্রশিল্পী ও ছোটগল্প লেখক গোলাম কাসেম ড্যাডি, যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি গøাস প্লেট নেগেটিভে ধারণ করেছেন মহাযুদ্ধের দুর্লভ মুহূর্ত। এই বরেণ্যে ব্যক্তিত্বের নামানুসারে ‘গোলাম কাসেম ড্যাডি লেকচার’ এর আয়োজন করেছে। এ বছর বক্তৃতা উপস্থাপন করেন ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ এর সম্পাদক নূরুল কবীর। তার বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘তিনটি ছাত্র গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯, ১৯৯০, ২০২৪): কারণ ও ফলাফল’।
আয়োজনের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী এবং দৃক পিকচার লাইব্রেরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা নূরুল কবীর বলেন, যে কোন স্বৈরতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ভরসা রাখতে হবে নাগরিক প্রতিরোধের উপর, ইতিহাস বোধ সম্পন্ন মানুষ মাত্রই সেটা করে। কারন জনগণের শক্তির সামনে কোনো বিদেশী শক্তিই টিকতে পারে না।
আমাদের দেশের অনেক স্বৈরতান্ত্রিক শক্তিকেই জনগণের প্রতিরোধের মুখে অতীতে তাড়ানো হয়েছে এমন মন্তব্য করে নূরুল কবীর আরো বলেন, যারা ইতিহাস চর্চা করেন তারা জানেন এই ধরনের প্রতিরোধ সকল সময় কাক্সিক্ষত ফলাফল এনে দিতে পারে না। কেন সবসময় এই ঐতিহাসিক সংগ্রামগুলো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌছতে পারে না, জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারে না, কোথায় গলদ ছিল তার অনুসন্ধান সর্বদা জরুরী। আমাদের এটা করা প্রয়োজন যাতে পরের সংগ্রামগুলোকে সফল করা সম্ভব হয়।
দৃক জানায়, ১৯৯৮ সালে দৃকের অধীনে দক্ষিণ এশিয়ার আলোকচিত্রগ্রাহীদের জন্য ‘পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। এখানে আগ্রহীদের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে ফিল্ম ও টিভি, ফটোগ্রাফি এবং সাংবাদিকতা বিষয়ক কোর্স রয়েছে। দৃকের উদ্যোগে ‘ছবি মেলা’ নামে আলোকচিত্রীদের জন্য একটি বার্ষিক মেলার আয়োজন হয়। আলোকচিত্রীদের নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘ছবি মেলা’ই প্রথম আয়োজন।
এ ছাড়াও দৃক বাংলাদেশে একটি মানবাধিকার নেটওয়ার্ক ‘বাংলারাইটস’ এবং স্বাধীন সংবাদ সংস্থা ‘দৃকনিউজ’ প্রতিষ্ঠা করে। দৃকনিউজ একটি স্বাধীন সংবাদ সংস্থা, যা নাগরিক সাংবাদিকদের ব্যবহার করে সংবাদ পরিবেশন করে থাকে।
বৈশ্বিক দক্ষিণ অঞ্চল থেকে আগত আলোকচিত্রগ্রাহকদের কাজ প্রচার এবং ন্যায্য বাণিজ্যের আলোকচিত্র প্রচারের জন্য, দৃক মেজোরিটি ওয়ার্ল্ড নামে একটি ছবি গ্রন্থাগার ও এজেন্সি স্থাপন করে। আলোকচিত্র উৎসব আয়োজনের জন্য দৃক ২০০৫-২০০৭ সালে প্রিন্স ক্লজ ফান্ড থেকে অনুদান পায়।