মধ্যরাতে চট্টগ্রামের শীর্ষ বিএনপি নেতাদের তদারকিতে আলোচিত ব্যবসায়ী এস আলম গ্রæপের মালিকানাধীন ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি একটি ওয়্যারহাউস থেকে একে একে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে দলটি। নোটিশ পাওয়া বিএনপি নেতারা হলেন- চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহŸায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহŸায়ক এনামুল হক এনাম এবং কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহŸায়ক এসএম মামুন মিয়া। যা ঘটেছিল মধ্যরাতে:বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে একটি ওয়্যারহাউসের ভেতর থেকে এস আলম গ্রæপের মালিকানাধীন বিলাসবহুল ১৪টি দামি গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে আছে বিএমডবিøউ, মার্সিডিজ ও অডি ব্যান্ডের গাড়িও। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দৃষ্ট হয় এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্তত ১৫ জনের একটি দল এস আলম গ্রæপের ওয়্যারহাউসের সামনে আসে। একই সময়ে আরও তিনটি গাড়ি সেখানে পৌঁছায়। সেখানে গাড়ী থেকে একে একে নামেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক এনামুল হক এনাম, পটিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলু এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহŸায়ক শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়ন। এস আলম গ্রæপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের ছেলের শ্বশুর মীর গ্রæপের আবদুস সালাম বিএনপি নেতা এনামুল হক এনামের মামাতো ভাই।ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, একটি গাড়ি থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহŸায়ক আবু সুফিয়ানের ড্রাইভার মনসুরকে নামতে দেখা যায়। সেই গাড়ির ভেতরে আবু সুফিয়ান বসে ছিলেন। নইলে ওয়্যারহাউসে তার ড্রাইভারের আসার কথা নয়। নাম প্রকাশে একজন জানান, কিছুক্ষণ পরই আমরা বুঝতে পারি শুরুর দিকে আসা ১৫ জনের পুরো দলটিই ছিল মূলত ড্রাইভার। কারণ তাদের একেকজনকে একেকটি গাড়ির চালকের আসনে বসানো হচ্ছিল। এভাবে আমরা অন্তত ১৪টি গাড়ি নিয়ে যেতে দেখেছি। প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিলাসবহুল গাড়িগুলোর সবকটি বের হওয়ার পরই এনামসহ বাকি সব নেতা ওয়্যারহাউসের সামনে থেকে সরে যান। ঘটনার ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘গাড়ি শুধু নয়, গাড়িগুলোর ভেতরে কিছু একটা ছিল। আমাদের ধারণা, সেখানে বিপুল অংকের টাকা ছিল। শুধু গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সেখানে সশরীরে আসার কথা নয়।’ গাড়িগুলো কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলতে পারেননি। তবে তারা জেনেছেন, গাড়িগুলো সীতাকুÐের দিকে গেছে। কিন্তু চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় ছিল, সেটা তারা জানতে পারেননি।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তরা যা বললেন:এদিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর চট্টগ্রামসহ সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর ২টায় দোস্ত বিল্ডিং দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ‘মিথ্যা সংবাদ’ প্রচার করার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহŸায়ক আবু সুফিয়ান এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়ক এনামুল হক এনামসহ জেলা নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।লিখিত বক্তব্যে আবু সুফিয়ান দাবি করেন, ‘গত ২৯ আগষ্ট চট্টগ্রামের কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত মীর গ্রæপের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোনে কে বা কারা প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরবর্তীতে বিএনপির নাম দিয়ে টাকা চাঁদা দাবি করছে বলে এনামুল হক এনামকে অবহিত করেন। যদি চাঁদা না দেয়, তাহলে মীর গ্রæপের প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা চালাবে বলেও হুমকি দেয়। তাই মীর গ্রæপের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কামনা করা হয়। বিএনপির নাম দিয়ে ফোন করার ঘটনা অবহিত হওয়ার পর এনামুল হক দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহŸায়ক হিসেবে আমাকে ঘটনার কথা জানান। তারপর আমরা কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় অবস্থিত মীর গ্রæপের প্রতিষ্ঠানে যাই এবং চাঁদাবাজদের হুমকির ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করি। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে বিএনপির নাম ব্যবহার করা চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করতেই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩০ মিনিট মত অবস্থান করে মীর গ্রæপের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করি এবং বিএনপি নাম দিয়ে কেউ যদি কোন ধরনের চাঁদা দাবি করে, তাহলে তাদেরকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে আমরা চলে আসি। মূল ঘটনা হলো এটা। অথচ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রচার করেছে আমরা নাকি কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন মইজ্জার টেক এলাকায় অবস্থিত এস আলম গ্রæপের ওয়্যার হাউজে গিয়েছিলাম। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রপাগাÐা ছাড়া আর কিছু নয়।