গত জুন মাস থেকে সরকারিভাবে সার আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলছে না ব্যাংকগুলো। কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, ডলার সংকট। এছাড়া আগে আমদানি করা সারের মূল্য পরিশোধ করা হয়নি। এ কারণে বাংলাদেশে সার রপ্তানি করতেও রাজি হচ্ছে না বিদেশি সরবরাহকারীরা। এর মধ্যে গ্যাসের অভাবে টানা কয়েক মাস ধরে দেশের তিনটি ইউরিয়া সার কারখানার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সার সংকট দেখা দেবে। আর কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। তবে এ সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য নানামূখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সরকারের বিভিন্ন দফতর বলছে, চলতি মৌসুমে সারের কোনো সংকট হবে না। তবে আমদানি করা না হলে বা দেশীয় উৎপাদন না বাড়ালে বোরো মৌসুকে সংকট দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। বোরো মৌসুমেই সারের চাহিদা বেশি থাকে।
গত বুধবার অর্থনৈতিক ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সারের সরবরাহ আমরা কোনোভাবেই কমতে দেব না। তিনি বলেন, সভায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল সার ক্রয় ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মসুর ডাল ক্রয়। আমরা অনুমোদন দিয়েছি। এর জন্য যা অর্থকড়ি লাগে সেটা ফরেন কারেন্সিতে হোক, আমরা দেব। এটা দ্রæতই করতে হবে।
তথ্য অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও কাতার থেকে ৩০ হাজার টন করে ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) থেকেও ৩০ হাজার টন ইউরিয়া কেনা হবে। সব মিলিয়ে ৯০ হাজার টন সার ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ৩০ হাজার মেট্রিকটন পটাশ সার দেবে বলে গতসপ্তাহে ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি জানিয়েছেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছরের মতো নিয়মিত প্রক্রিয়ায় সার ব্যবস্থাপনার কাজ চলমান রয়েছে। আমদানির কাজও চলমান রয়েছে। সম্প্রতি সার আমদানির বাকেয়া পরিশোধ ও এলসি খোলা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ডলার নিশ্চিত করার উদ্যোগ চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
তথ্য অনুযায়ী, ইউরিয়া সার বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের মাধ্যমে আমদানি ও উৎপাদন করা হয়। এ ছাড়া ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) এবং মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় আমদানি করে থাকে। এর বাইরে কিছু পরিমাণ সার বেসরকারি পর্যায়েও আমদানি হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫৯ লাখ টন বিভিন্ন সারের চাহিদার বিপরীতে দেশের এ সারের মজুত রয়েছে প্রায় ১৮ লাখ টন। বেসরকারিভাবে ২৭ লাখ ইউরিয়া, টিএিসসি সাড়ে ৭ লাখ টন। এমওপি সাড়ে ৯। ডিএপি ১৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের নির্বাহী সচিব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, চাহিদার সাড়ে ৯ লাখ টন বেসরকারি কোম্পানীগুলো আমদানি করে। এর মধ্যে ডিএপি ৫ লাখ টন, এমওপি আড়াই লাখ ও টিএসপি ২ লাখ টন।
তিনি জানান, সরকারের কাছে টাকা বকেয়া থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তবে এ সমস্যা কেটে যাচ্ছে। আর ডলার সংকটও ছিল। তাই এলসি খোলা যাচ্ছিল না। সরকারের উদ্যোগে সংকটও কেটে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি আমন মৌসুমে সার নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। বোরো মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় আছে এখনো। এর মধ্যেই সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দেশে রাসায়নিক সার আমদানি হয় মূলত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) মাধ্যমে। ইউরিয়া সারের পুরোটাই আমদানি করে বিসিআইসি। সরকারি প্রতিষ্ঠান দুটি বছরের যেকোনো সময় চাইলে সার আমদানি করতে পারে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের কেবল মে মাসে দরপত্রে অংশ নেয়ার মাধ্যমে সার আমদানি করতে পারে।
ননইউরিয়া সার আমদানি করে থাকে বিএডিসি। এই সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপন (সার ব্যবস্থাপনা) মো: আজিম উদ্দিন বলেন, আগামী তিন মাসের জন্য যে সার প্রয়োজন তা মজুদ আছে। এরপরে যে সার লাগবে তা আমদানির জন্য প্রক্রিয়াধীন।