সার্বিক পরিস্থিতি,দেশ সংস্কার এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার বিকেল ৩টায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় শুরু হবে এ মতবিনিময় সভা। যা রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টাকে সংলাপে বসার আহŸান জানান বিএনপি নেতারা। সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে একটি রোডম্যাপ জনগণের সামনে পেশ করতে পারেন বলে বিএনপি প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আলোচনার পর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করবে সরকার। এর পর নির্বাচন সম্পন্ন করার রোডম্যাপ জনগণের সামনে পেশ করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
সূত্র জানিয়েছে,দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, সংস্কার এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনা হবে। তবে আগের বৈঠকের মতো এই বৈঠকেও আওয়ামী লীগসহ তাদের জোটের কোনো দল থাকবে না বলে জানা গেছে।
পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনার প্রক্রিয়া চালু রাখব, তাদের কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব যা আসবে সেগুলো গ্রহণ করব। সে ব্যাপারে একটা পদ্ধতির বিষয়ে কথা হয়েছে।
গতকাল উপদেষ্টা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলকেই মতবিনিময়ে চাইছি। মতবিনিময়ে আগ্রহীরা সবাই আসবে। দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে বুঝতে পারবেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা তো অবশ্যই এই মতবিনিময়ে অংশ নেব। আমরা আমাদের কথাগুলো বলবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার এবং নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের আলোচনা শুরু করতে হবে। এই সরকার কোন কোন কাজ করতে পারবে,সেই কাজ করার জন্য কতদিন সময় প্রয়োজন হবে তা আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে অন্যান্য দল এবং সেনাবাহিনী আলোচনা করে এই সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারকে স্বাগত জানানো হয়। তবে গত ২৪ আগস্ট থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন প্রশ্নে ‘অতি দ্রæত’ সংলাপের দাবি জানাচ্ছিলেন। মূলত এই দাবির প্রেক্ষিতেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ৪৫টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর বাইরে আলোচিত জামায়াতে ইসলামীসহ অনেক দলই ও মোর্চা নিবন্ধনের বাইরে থেকেই রাজনীতির মাঠে সক্রিয় রয়েছে।
প্রসঙ্গত যে, নির্বাচন নিয়ে ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। তিনি বলেন, দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহŸানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব, যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়—আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে, আমরা চলে যাব।