৫২ বছরেও বাড়েনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের জনবল। ১৯৭২ সালে প্রতি উপজেলায় ২ জন আর জেলায় ৭ জন জনবল নিয়োগ হয়েছিল যা ২০২৪ সালে এসেও বাড়ানো হয়নি। এতে ব্যহত হচ্ছে বন্যাসহ বিভিন্ন বিভিন্ন দুর্যোগে মাঠ পর্যায়ের কাজ। কর্মকর্তারা জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি পদের আপগ্রেডেশন চান। সংকটের কথা স্বীকার করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলছেন, দ্রæতই বাড়ানো হবে জনবল।
এদিকে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২’ বাস্তবায়ন, ফিল্ড পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসহ নানা বিষয়ে সংস্কার চেয়ে মানববন্ধন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, অধিদপ্তরে প্রতিটি উপজেলায় রয়েছে মাত্র একজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহকারি। পুরো জেলায় রয়েছেন একজন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাসহ মাত্র ৭ জন। যা ১৯৭২ সালেও একই ছিল। ৬৪ জেলায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা থাকলেও সারাদেশে গাড়ি রয়েছে মাত্র ১৯টি। জনবল সংকটসহ নানা সংকটে চলমান বন্যায় অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-প্রকল্প পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধ বিধ্বস্ত নবসৃষ্ট বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ-সংস্কার- রক্ষণাবেক্ষণ তথা দেশ গঠন, জনসাধারণকে সহায়তা প্রদান এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে থানা (বর্তমানে উপজেলা পরিষদ) পর্যায়ে একটি করে ২য় শ্রেণির প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পদ সৃষ্ট হয়। তৎকালীন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়) সরাসরি তত্ত¡াবধানে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাগণ থানা পর্যায়ে তাদের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়) অধীন ‘ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর’ (বর্তমানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর) সৃষ্ট হয় এবং উপজেলা পরিষদ পর্যায়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (২য় শ্রেণি) ১টি পদ, অফিস সহকারীর ১টি পদ এবং জেলা পর্যায়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার (৭ম গ্রেড) ১টি পদকে অধিদপ্তরের আওতায় অন্তভর্‚ক্ত করে এ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে আসছে। ১৯৭২সালে থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫২ বছর অতিবাহিত হলেও উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে আর কোন জনবল বৃদ্ধি এবং অন্যান্য দপ্তরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পদ মর্যাদা যুগোপযোগী করা হয়নি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ অনুমোদিত হওয়ার পর ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো বিলুপ্ত হয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (ডিডিএম) গঠিত হলেও বিগত ১২ বছরে জনবল কাঠামো এবং নিয়োগ বিধি প্রণীত হয়নি বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা মানববন্ধন থেকে ৮ দফা দাবি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেছি। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা পদের আপগ্রেডেশন ও পদনাম পরিবর্তন করতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ এর আলোকে প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো ও নিয়োগ বিধিমালা অনুমোদন করতে হবে। সচিবালয়ের ন্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মচারীদের পদনাম পরিবর্তন ও আপগ্রেডেশন করতে হবে। অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরাধীন সকল প্রকল্পে কর্মরত(আউটসোর্সিং/প্রকল্প/মাষ্টাররোল ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী, কার্যসহকারী, হিসাব রক্ষক, হিসাব সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, গাড়ি চালক, অফিস সহায়ক, লিফট অপারেটর, ইলেক্ট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাজস্বখাতে সৃষ্ট পদে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত অফিস সহায়কদের চাকরি এবং প্রকল্পের অধীনে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম সাংবাদিকদের বলেন, বিষেয়গুলো কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমরা দ্রæতই সংস্কার করবো।