দোকান কর্মচারী শাহজাহান হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপরই শুক্রবার বিকালে আদালতে হাজির করলে তাকে আট দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠায় ঢাকার মহানগর হাকিম আরফাতুল রাকিব। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার এসআই মো. সজিব মিয়া দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। এদিকে জিয়াউল আহসানকে কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার গ্রেফতার সম্পর্কে শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পাঠানো খুদে বার্তায় বলা হয়, নিউমার্কেট থানার একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই মামলায় গত ১৪ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ. রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে দশ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতার দাবির মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিলুপ্ত করা হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদও। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে গঠন করা হয় অন্তবর্তিকালীন সরকার। পরবর্তীকালে সেনাবাহিনীতে রদবদল আনা হয়। গত ৬ আগস্ট মঙ্গলবার চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয় মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।
জিয়াউল আহসান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘদিন র্যাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালে র্যাব-২ টুআইসি হিসাবে যোগদান করেন। তখন লে.কর্ণেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র্যাব সদরদপ্তরে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হিসাবে যোগ দেন। ২০১৩ সালে কর্ণেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদে তাকে পদায়ন করা হয়। শাপলা চত্ত¡রের হেফাজতের মহাসমাবেশের সময় তিনি র্যাবের অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। এরপর তাকে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) পদে পদায়ন করা হয়। এক বছর পরে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) পরিচালক করা হয়। ২০২১ সালে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়ে এনটিএমসি’র মহাপরিচালন হন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও গুলির ঘটনায় গত ১৬ জুলাই রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পাপোশের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে তার মা আয়শা বেগম (৪৫) একটি মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী শাহজাহান আলী নিউ মার্কেট থানাধীন মিরপুর রোডের বলাকা সিনেমা হলের গলির মুখে পাপোশের দোকানে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো গত ১৬ জুলাই সকাল ৯টার দিকে দোকানে যান তিনি। সেদিন সন্ধ্যায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মামলার বাদীকে মোবাইল ফোনে জানান যে, শাহজাহান আলী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহজাহানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে শাহজাহানের মরদেহ শনাক্ত করেন বাদী।