জেল থেকে একে একে বেরিয়ে যাচ্ছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। এদের প্রায় সবাই কমপক্ষে ২২ বছর ধরে কারাবন্দী ছিলেন। খুন, চাঁদাবাজি, ভাংচুর ও দখলবাজির অভিযোগে এদের বিরুদ্ধে ৭ টি থেকে ১৫ টি মামলা রয়েছে। সব কটি মামলায় জামিন পাওয়ার পর একে একে তারা কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তির তালিকায় থাকা ৫ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে ৪ জনের নাম জোট সরকারের আমলে ঘোষিত তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম রয়েছে। এরা হলেন আব্বাস, টিটন ও ফ্রিডম রাসু। তালিকার বাইরে সানজিদুল ইসলাম ইমন ওরফে কলাবাগান ইমন ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড কারাগার থেকেই নিয়ন্ত্রন করতেন। এদের মধে তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকার মধ্যে ৩ জন মুক্তি পেয়েছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেল থেকে। গত বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ইমন মুক্তি পান।
কারা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, দুই একদিনের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আরমান, পিচ্চি হেলাল ও সুইডেন আসলাম মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া ইমনের প্রধান সহযোগী মামুন গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জামিনে মুক্তি পান। মুক্তির পর থেকে মোহাম্মদপুরের একটি শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রæপ তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও বিজি প্রেস এলাকায় তাকে হত্যা করতে গিয়ে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুঁড়লে ভুবন চন্দ্র শীল নামে একজন আইনজীবী নিহত হন। ওই ঘটনার দুই মাস পর মামুন তার পুরানো একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। গত সপ্তাহে মামুন জামিনে মুক্তি পান।
২০০১ সালের ২৭ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডের ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করে। এদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তালিকার প্রথম ৮ জনের জন্য ১ লাখ টাকা করে এবং তালিকার শেষ ১৫ জনের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। খোরশেদ আলম রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু ছিল তালিকার ৬ নম্বরে। ২০০৩ সালের ১৫ মে রাতে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবির ইন্সপেক্টর নুরুল আলম শিকদার এবং এস আই আলমগীর হোসেনকে হত্যা করে শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম রাসু ও জিসান আলোচনা আসে। ২০০৩ সালের জুলাই মাসে ধানমন্ডির আবাহনী খেলার মাঠের পাশ থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে। তার ফাইভ স্টার গ্রæপের অন্যতম সদস্য শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান পাড়ি জমায় দুবাইয়ে।
গত মঙ্গলবার বিকালে একই কারাগার থেকে মুক্তি পান ফ্রিডম রাসু। রাসুর বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা, একাধিক হত্যা মামলাসহ মোট ১৩ টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ টি মামলায় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জামিন পান। ওই সময় কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আসলে, একটি গোয়েন্দা সংস্থা তাকে আটক করে আবার আরেকটি মামলায় কারাগারে পাঠায়। গত সপ্তাহে ওই মামলায় রাসু জামিন পাওয়ার পর তার মুক্তিতে আর কোনো আইনগত বাধা থাকেনি। মঙ্গলবার বিকালে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
সূত্র জানায়, গত সোমবার বিকালে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পান আব্বাস উদ্দিন ওরফে কিলার আব্বাস। রাজধানীর কাফরুল, কচুক্ষেত ও ইব্রাহিমপুর এলাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন ছিলেন আব্বাস। তার বিরুদ্ধে ৬ টি হত্যা মামলাসহ ১০ টি মামলা বিচারাধীন। তবে এই ১০ টি মামলায় একে একে তিনি জামিন পান।
তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকার ২ নম্বরে টিটনের নাম রয়েছে। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার একটি বাসা থেকে ডিবি ১ টি পিস্তলসহ তাকে গ্রেফতার করে। ২০০৪ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি এ্যাডভোকেট বাবর এলাহী হত্যা মামলায় তাকে মৃত্যুদন্ড দেয় আদালত। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরো ৫ টি মামলা ছিল। কয়েক বছর আগে উচ্চ আদালত তার মৃত্যুদন্ড রায় যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করে। বাকি মামলাগুলোর জামিন হওয়ার পর গত বুধবার কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পান।
এর আগে তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে অন্যতম বিকাশ কুমার বিশ্বাস ওরফে বিকাশ ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জামিনে মুক্তি পেয়ে লাপাত্তা হন। এরপর থেকে বিকাশ ফেরারী আসামী হয়ে ভারতে আত্মগোপন করেছে।
তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকায় চার নম্বর তালিকাভ‚ক্ত আসামী ছিলেন তানভীরুল ইসলাম জয়। ২০০৪ সালে তিনি পালিয়ে আমেরিকায় আত্মগোপন করেন। বছর চারেক আগে তিনি মালয়েশিয়ায় আত্মগোপন করেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় চলতি বছরে ১৩ এপ্রিল মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ নিয়ে তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় কারাবন্দী রয়েছেন মগবাজারে শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান, মোহাম্মদপুরের কামাল পাশা ও খিলগাঁওয়ের ফ্রিডম সোহেল। এর বাইরে পলাতক রয়েছেন হারিছ, ইমাম হোসেন, জব্বার মুন্না, মোল্লা মাসুদ, সুব্রত বাইন ও গোলাম রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর।