সাবেক উপদেস্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে ১০ দিন করে পুলিশী রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলীকে (২৪) হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে দেয়া হয়। গতকাল বুধবার তাদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালত ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মঙ্গলবার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান।
বুধবার দুপুরে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে এমন খবরে সেখানে ভীড় করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এছাড়াও উৎসুক জনতা কার্যালয়টির বাইরে অবস্থান করে। বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে তাদেরকে নিয়ে রওনা দেয় পুরান ঢাকা আদালত প্রাঙ্গনের উদ্দেশ্যে।
ওদিকে, আদালত প্রাঙ্গন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রাখে মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেটস আদালতের সামনের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ ভীড় করে। জনতার ভিড় ঠেলে প্রিজন ভ্যানটি আদালত প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে যথেষ্ঠ সময় লাগে। এসময় উপস্থিত জনতা ও আইনজীবীরা তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
সন্ধ্যার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক সজীব দুজনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এসময় দুই আসামীকে আদালতের লোহার খাঁচায় হাজির করা হয়। রিমান্ডের শুনানিতে আসামী পক্ষের কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। পরে শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ দুই আসামীর পৃথকভাবে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলায় যেসব অভিযোগ করা হয়ঃ
গত ১৬ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনের একটি দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে তার মা আয়শা বেগম (৪৫) একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয়।
এ মামলার অভিযোগে আয়শা বেগম বলেন, আমার ছেলে শাহজাহান আলী নিউমার্কেট থানার মিরপুর রোডের বলাকা সিনেমা হলের গলির মুখে পাপোশের দোকানে কাজ করতো। প্রতিদিনের মতো ১৬ জুলাই সকাল ৯টার দিকে দোকানে কাজ করার জন্য যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় অজ্ঞাতপরিচয় একজন ব্যক্তি ছেলের মোবাইল ফোন নম্বর থেকে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করে জানায়, শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি। আমি সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক পপুলার হাসপাতালে যাই এবং জানতে পারি, আমার ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমি তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই এবং মর্গে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করি।
তখন বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারি, গত ১৬ জুলাই আমার ছেলে অজ্ঞাতপরিচয় কোটাবিরোধীদের কর্তৃক গুরুতর রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়ে নিউমার্কেট থানাধীন মিরপুর রোডের টিটি কলেজের বিপরীত পাশে কাদের আর্কেড মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর পড়ে ছিল।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, উপস্থিত পথচারীরা তাকে চিকিৎসার জন্য দ্রæত ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ছেলের অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ছেলেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ৫ মিনিটের দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
সালমানের ১২ ও আনিসুলের কাছে ২ দেশের মুদ্রা ঃ
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মো. সজিব মিয়া তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সালমান এফ রহমানের কাছে থেকে ১২ হাজার ৬২৪ ইউএস ডলার, ৬২০ সুইস ফ্রাংক, সাড়ে ৮ হাজার দিরহাম, ১৩ লাখ উজবেকিস্তানি সোম, ১১ হাজার ৬৫০ রিয়াল, ৭৭৯ সিঙ্গাপুরের ডলার, দেড়শো ব্রিটিশ পাউন্ড, ১ হাজার ৩২১ ইউরো, ৫০ হাজার টাকা, ৬ হাজার ২৩০ ভুটানি গুলট্রাম, এক হাজার ভারতীয় রূপি, ৩ হাজার ৩২০ থাইল্যান্ডের বাথ মুদ্রা জব্দ করা রয়েছে। পাশাপাশি তার কাছে থেকে সবুজ রঙের পাঁচটি ও ক‚টনৈতিক একটি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া আনিসুল হকের কাছ থেকে ১৭ হাজার ৫১২ ইউএস ডলার, ৭২৬ সিঙ্গাপুরের ডলার এবং ৩টি ক‚টনৈতিক পাসপোর্ট পাওয়া গেছে।