রাজধানীতে পৃথক দুটি ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী ও দুই সহোদরকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। এরমধ্যে সায়দাবাদে সাইফ আরাফাত শরীফ (২০) ও সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন (১৯) নামে দুই শিক্ষার্থীকে একটি আবাসিক হোটেলে পিটিয়ে খুন করা হয়। তারা দুজনই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। গণধর্ষণের অভিযোগ এনে দুর্বৃত্তরা তাদের পিটিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও মৃত্যুর আগে তারা স্বজনদের জানিয়েছেন, মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাদের পিটানো হয়েছে। আর ওয়ারীতে ফ্লাট নিয়ে দ্বন্দে আল আমিন ভুঁইয়া (৪২) ও নুরুল আমিন ভুঁইয়া (৩৫) নামে আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। এদের মধ্যে আল-আমিন ভ‚ঁইয়া ওয়ারী থানার ৪১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এই দুটি জোড়া খুনের ঘটনাতেই মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। তবে হত্যাকান্ড দুটিতে জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
সায়েদাবাদে নিহত দুই শিক্ষার্থীর বিষয়ে স্কাউট সদস্য সম্রাট শেখ জানান, ব্যাপক মারধরের শিকার ৩ ছাত্রকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কয়েকজন মিলে যাত্রাবাড়ী থানায় দিয়ে যায়। থানায় তারা ছটফট করছিলো। তখন জানা যায়, সায়দাবাদ এলাকায় কোনো হোটেলে তাদেরকে শারীরিকভাবে এই নির্যাতন করা হয়েছে। আস্তে আস্তে তাদের অবস্থার অবনতি দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাইফ ও ইয়াসিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ইয়াসিনের মা শিল্পী আক্তার জানান, ইয়াসিন ১৫ দিন ধরে সেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছিলেন। গত মঙ্গলবার সকালে সে যাত্রাবাড়ী ধলপুর বউবাজারের বাসা থেকে বের হন। এরপর বহুবার মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তার। গতকাল বুধবার ভোর ৪টার দিকেও মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। তখনো ইয়াসিন সুস্থ্য স্বাভাবিক আছেন বলে জানান মাকে। এরপর গতকাল সকালে কেউ একজন তার মাকে ফোন করে জানান, তার ছেলের অবস্থা ভালো না, দ্রæত যাত্রাবাড়ী থানায় আসতে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি থানায় গিয়ে ছেলেকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান। শিল্পী আক্তার আরো জানান, থানা থেকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নেয়ার সময় আমার ছেলে কথা বলতে পারছিলো। বলছিলো, ওদেরকে মিথ্যা অভিযোগে মারধর করা হয়েছে। ওরা কোনো অপরাধ করেনি। এরপর ধিরে ধিরে নিস্তেজ হয়ে যায় ইয়াসিন। ইয়াসিনের বাবার নাম সাখাওয়াত হোসেন। থাকেন ধলপুর বউ বাজার এলাকায়। কুতুবখালি এলাকার একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন তিনি।
আর নিহত সাইফের মানিব্যাগে থাকা এনআইডি কার্ড থেকে তার নাম পরিচয় জানা যায়। তার বাবার নাম কবির হোসেন ও মা মরিয়ম। বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কদমিরচর গ্রামে। বর্তমানে যাত্রাবাড়ী টনি টাওয়ার এলাকায় থাকতেন। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ওই শিক্ষার্থীরা কেন পিটানো হয়েছে- সেটি আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তদন্ত চলছে। হত্যাকান্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। নিহতদের মরদেহ দুটি ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে বলেও জানান ওসি আবুল হাসান।
এদিকে গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওয়ারীর হাটখোলা এলাকার ফকির বানু টাওয়ারের পাশের গলিতে আল আমিন ভুঁইয়া ও নুরুল আমিন ভুঁইয়া নামে আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুপুর দেড়টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা ওয়ারীর ২ নং কে এম দাস লেনের শামসুদ্দিন ভ‚ঁইয়ার ছেলে।
নিহতের বড় ভাই রুহুল আমিন বলেন, আমার ছোট ভাই আল আমিন ওয়ারী থানা বিএনপি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিল। আরেক ছোট ভাই নুরুল আমিন পাঠাও মোটরবাইক চালক ছিল। দুই ভাইকে কে বা কারা কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ওয়ারীর হাটখোলা এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রæত তাদের উদ্ধার করে ঢামেকে নিলে চিকিৎসক জানান, আমার দুই ভাই আর বেঁচে নেই। আল আমিন ভুঁইয়ার স্ত্রী মুনমুন বলেন, দেড় বছর আগে রিপন নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলাম আমরা। ফ্ল্যাট রেডি হলেও তা বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছিল না। এসব নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের জেরে রিপন তার লোকজন নিয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সি বলেন, ফ্ল্যাট সম্পর্কিত ঝামেলায় এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে স্বজনরা একটি হত্যা মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান ওসি।