spot_img

আন্দোলন যেভাবে গণআন্দোলনে রূপ নিল

আবু সাঈদকে গুলি করে মেরে ফেলা হলো। পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলো বন্ধ করে দেয়া হলো। আমরা আশঙ্কা করছিলাম আন্দোলন থেমে যায় কি না, কিন্তু তখন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা বের হলো। তাদের সঙ্গে যোগ দিলো কলেজ, এমনকি স্কুলের শিক্ষার্থীরাও। সাধারণ মানুষও আন্দোলনে সমর্থন দেয়। অভিভাবকরা খাবার, পানি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়ান। এভাবেই আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
গতকাল বুধবার সকালে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)-এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া তরুণরা আন্দোলন সর্ম্পকে এভাবেই বলেন। নিজের বন্ধুকে কবর দেয়ার বর্ণনায় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন উপস্থিত সকলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত দেশের নানা প্রান্তির তরুণ-তরুণীদের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা জানার জন্য ২৫ জনকে নিয়ে এ সভা আয়োজন করে এমজেএফ।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ বলেন তখন সবাই ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এরপর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশ হামলা চালিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করে তখনও প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের প্রতি কোনো সহানুভূতি না দেখিয়ে শুধু পুলিশ আর ছাত্রলীগনিয়ে কথা বলেন। পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলে মুগ্ধসহ আরও অনেক শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও হত্যার ভিডিওগুলো সামনে আসতে থাকে। একের পর এক এসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদই আন্দোলনকে জোরদার করা হয়েছে।
‘১৮ জুলাই আন্দোলনে গিয়ে আমার বন্ধুর বুকে দুটো গুলি লাগে। পরদিন আমি তার বাড়িতে যাই, নিজের বন্ধুকে কবর দিয়ে আসি’, বলছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি)- এর শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ। বাংলাদেশ রিডস-এর প্রতিষ্ঠাতা মিঠুন দাস কাব্য জানান,তরুণদের নিয়ে তার বই পড়া কার্যক্রমের একজন নিয়মিত সদস্য আকরাম হোসাইন কাওসারকে হারানোর কথা।
ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন কীভাবে গণআন্দোলনে রূপ নিলো সে প্রসঙ্গে সংস্থা ইয়ুথ মুভমেন্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা আকরাম হোসেইন বলেন, পুলিশ কখনো আন্দোলন থামাতে চায়নি। তারা লাশ চেয়েছে। সরাসরি বুকে, চোখে, মাথায় গুলি করেছে। মানুষ বলে মনে করেনি আমাদের। মানুষ মনে করলে এভাবে গুলি চালাতে পারতো না।আন্দোলনে অংশ নেয়ায় নানামুখী হেনস্থার বিষয়ে কার্টুনিস্ট ও ফ্যাক্ট চেকার রাফিদ আরিয়ান বলেন, আমি শেখ হাসিনার একটি কার্টুন এঁকে ফেসবুকে পোস্ট করায় আর নিজের বাড়িতে থাকতে পারিনি। আমি বাড়ি থেকে বেরহওয়ার পরই ডিবির অন্তত ৩০ জন আমার বাড়িতে আসে। এরপর থেকে শুধু আমি নই, আমাদের এলাকার প্রতিটি স্টুডেন্ট আতঙ্কে রাত কাটিয়েছে যে কখন কাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি প্রসঙ্গে সব তরুণই বলেন, তারা কেউ ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে না। তবে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও শিবিরের যে দীর্ঘদিনের দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি সেটি আর কেউ চান না। সেই সঙ্গে এই প্রজন্মের আরেকটি চাওয়া, সরকার বা ক্ষমতায় যারা থাকবেন তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
সব শেষে এমজেএফ-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, এই প্রজন্মের কাছে আমাদের অনেক আশা। তাদের দ্বারা যে কোনো কিছু সম্ভব। তারাই আমাদের সমাজে পরিবর্তন আনবে। আমরা সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। শুধু তাদের এক হয়ে কাজ করে যেতে হবে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ