কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে এক দোকান মালিকের মৃত্যুর ঘটনায় পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হত্যা মামলার আবেদন সরাসরি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আদাবর থানার বাসিন্দা এসএম আমীর হামজা (শাতিল) নামের এক ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ এবং যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারকে। সাতজনের নাম উল্লেখ ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যবৃন্দকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসাবে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। দন্ডবিধির ৩০২/১৪৯/৩৪ ধারায় এই মামলা করা হয়।
মামলার এজাহারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আন্দোলন চলাকালে শক্ত হাতে তা দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দুই নম্বর আসামি ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে আন্দোলন দমনের নির্দেশ দেন। তিন নম্বর আসামি সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, চার নম্বর আসামি হারুন-অর-রশীদ, ছয় নম্বর আসামি বিপ্লব কুমার সরকার ও সাত নম্বর আসামি হাবিবুর রহমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে তাদের অধীনস্ত পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। পাচ নম্বর আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করার নির্দেশ দেন। অন্যান্য অজ্ঞাতনামা পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর নির্দেশে হত্যাকান্ড ঘটে। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতাকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে হত্যা করে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই হত্যাকান্ডের বিচার হওয়া আবশ্যক। মোহাম্মদপুর থানাধীন বসিলা ৪০ ফুট চৌরাস্তা পাকা রাস্তার উপর গত ১৯ জুলাই বিকালে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মামুন মিয়া বলেন, আদালত আবেদনটি এজাহার হিসাবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। এজাহার হিসাবে গণ্য করে সংশ্লিষ্ট থানাকেই মামলাটির তদন্ত করতে হবে বলেও জানান তিনি।
বাদী আমীর হামজা বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকেই আমার মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমি এই হুমকিকে ভয় পাই না।
যা বলা হয়েছে এজাহারে:
এজাহারে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। গত ১৮ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গতি সঞ্চার হয়। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলকে দমানোর জন্য তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার দমন পীড়ন শুরু করে। শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। ১৯ জুলাই বিকাল ৪ টার সময় মোহাম্মদপুরের বসিলা ৪০ ফিট চৌরাস্তায় হাজার হাজার ছাত্র জনতা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করে। সেই আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি করে। এ সময় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ (৪৫) রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। তার মাথার এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন জানায় আবু সায়েদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর স্থানীয়রা তার লাশ গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়োয়া বামনহাট ইউনিয়নের নতুন বস্তি প্রধানহাটে পাঠিয়ে দেয় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। যেহেতু পঞ্চগরে নিহতের বাড়ি এবং তার পরিবার অত্যান্ত গরীব। এ কারনে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না। সচেতন নাগরিক হিসাবে বাদী এই হত্যাকান্ডের বিচার চান। বিচারক বাদীর জবানবন্দি গ্রহন করে মামলাটি এজাহার হিসাবে গণ্যের নির্দেশ দেন।