দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু স¤প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলার প্রতিবাদে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকার শাহবাগ অবরোধ করে দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ করেছে সংখ্যালঘুরা।
গতকাল শনিবার বিকাল ৩টার পর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধরা। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শাহবাগ হয়ে ফার্মগেট, মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ হয়ে এলিফ্যান্ট রোড এবং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আগের দিন শুক্রবারও প্রায় চার ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়ে এদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
গতকাল বেলা তিনটার দিকে শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করেন কয়েকশ মানুষ। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও চার দফা দাবি জানান বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড-ব্যানার হাতে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ গীতা পরিষদ, সনাতন ছাত্র সমাজ, সাউথ এশিয়ান দলিত ফোরাম, বাংলাদেশ চ্যাপ্টারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ছাত্রসহ ধর্মীয় সংগঠন। এদিন সকালে একই দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই কথায় না কাজে চাই’, ‘যারা বলে বাংলা ছাড়, দেশ কি তার বাপ দাদার’, ‘রক্তে আগুন লেগেছে হিন্দু জেগেছে’, ‘আমার মাটি আমার মা দেশ ছেড়ে যাব না’, ‘দেশ যদি হয় স্বাধীন হিন্দুরা কেন পরাধীন’, ‘এ দেশে জন্ম আমার, দেশটা কারো বাপের না’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’, ‘বাংলাদেশ কারো বাপের না’সহ ইত্যাদি ¯েøাগান দিতে থাকেন তারা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক সংগঠনের বিশ্বনাথ বলেন, হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাট চালানে করা হচ্ছে। কয়েকটি স্থানে হত্যাকান্ড হয়েছে। আমরাতো এ দেশেই জন্মেছি, আমরা কোথায় যাবো? ক্ষমতায় যেই আসুক আমাদের নিরাপত্তা চাই। আমরা আমাদের বাসস্থান ও ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তা চাই।
সমাবেশে আগত পিন্টু দত্ত, সুজন মল্লিক, বিশ্বনাথ মহন্ত, শিল্পী রানী সরকার, গগনলাল ইত্তেফাককে বলেন, আমাদের উপর চরম বৈষম্য চলছে। বাড়ি ঘরে হামলা, লুটপাটের পাশাপাশি নারীদের উপর অত্যাচার নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে গেছে। দেশ থেকে হিন্দু তাড়ানোর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এমনকি ছাত্রদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সুফলও হাইজ্যাক হয়ে গেছে। সর্বশেষ বৈষম্য দেখা গেল তত্ত¡াধায়ক সরকারের শপথের সময় কেবল একটি ধর্মকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, সেখানে আমাদের অবস্থান কোথায়?
তারা বলেন, আমাদেরকে নিয়ে সবাই খেলে। আমরা সংরক্ষিত আসনে পৃথক নির্বাচন চাই এবং সংসদে গিয়ে আমরা আমাদের কথা বলতে চাই। দাবী পুরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছাড়ব না।
বিক্ষোভে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করার দাবি নিয়ে ৪ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে আছে-সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে; সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সব হামলা প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; এবং সংখ্যালঘুদের জন্য ১০ শতাংশ সংসদীয় আসন বরাদ্দ করতে হবে।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করার পর থেকে দেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরেও হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে।
বিভিন্ন সংগঠন হিন্দুদের মন্দির পাহারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে ফেইসবুকে নানা ছবি প্রচার করছে। তবে এতেও হামলা বন্ধ হয়নি।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন নীপিড়ন ও ভয় ভীতির প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়ের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন নির্বাহী সভাপতি অ্যাডঃ প্রদীপ কুমার পাল, সহ-সভাপতি দুলাল মন্ডল, মহাসচিব অ্যাডঃ গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, যুগ্ম-মহাসচিব নকুল কুমার মন্ডল, সুমন কুমার শীল, সঞ্জয় ফালিয়া, সাংগঠণিক সম্পাদক কিশোর বর্মন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ প্রতিভা বাকচী, যুব মহাজোটের সভাপতি গৌতম সরকার অপু, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল মধু, ছাত্র মহাজোটের সভাপতি সজিব কুন্ডু তপু, নির্বাহী সভাপতি উজ্জ্বল মালাকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভ্র তালুকদার, পল্লব কুমার দাস, নয়ন বৈরাগী, টিম্পল পাল, হৃদয় চন্দ্র দাস, হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক মহাজোটের সভাপতি তোলন পাল, সাধারণ সম্পাদক চয়ন বাড়ৈ, মহিলা মহাজোটের সভাপতি বহ্নি শিখা দাস, সাংগঠণিক সম্পাদক সমাপিকা দাস, গোপাল মালাকার, তাপস বিশ্বাস রাজিব, নুপুর বসাক, ফাল্পুনি বসাক প্রমূখ।