দেশব্যাপী ধর্মীয় সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর সা¤প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর সংখ্যালঘুদের উপর এসব নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করে বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক, বাংলাদেশ সনাতনী সচেতন ছাত্র সমাজ, সনাতনী শিক্ষার্থী ঐক্য এবং সুশীল সমাজের নাগরিকরা। এরপর জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে অবস্থান করেন। এতে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক ডা. মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায় বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই সারা দেশে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঘরবাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একের পর এক হামলা চলছে। এই পরিস্থিতিতে বৈষম্য কি শেষ না শুরু, আমরা বুঝতে পারছি না। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশে আর একটিও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটবে না, এমন ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা শাহবাগে অবস্থান চালিয়ে যাব।
অবস্থান কর্মসূচিতে শ্লোগানের পাশাপাশি অনেকেই বক্তব্য রাখেন। এ সময় ‘সা¤প্রদায়িক কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ ‘আমার বাড়ি হামলা কেন? সরকার জবাব চাই’, ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’ ‘আমার ভাঙল কেন জবাব দে জবাব দে’, ‘জাগো রে জাগো হিন্দু জাগো’ এরকম শ্লোগান দিতে থাকেন পুরো শাহবাগজুড়ে।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু মন্দির ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু মা-বোনদের ধর্ষণ এবং হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক। তারা এই সঙ্কটের দ্রæত সমাধান দাবি করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির, প্রতীমা, হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর লুটপাট অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু মা-বোনদের ধর্ষণ করা হয়। দেশত্যাগের হুমকি দেওয়া হয়। রাতের আঁধারে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। বিগত দিনে হওয়া হিন্দু নির্যাতনের কোনও বিচার না হওয়ায় নির্দ্বিধায় এই নারকীয় কর্মকাÐ চালিয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম, প্রতিনিধি ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
এ সময় চয়ন পাল নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর যেভাবে অত্যাচার নিপীড়নসহ মন্দির ভাঙচুর করা হয়, এটার প্রতিবাদ জানানোর জন্যই আমরা আজকে এখানে সবাই একত্রিত হয়েছি।
বিভিন্ন স্থানে মন্দির, প্রতীমা, হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর লুটপাট অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা
সুজন দেবনাথ নামের আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এতে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। আমরা আশা করবো দ্রæতই এই সমস্যার সমাধান চাই।’
এসময় বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের কাছে ২০ দফা অধিকার ও দাবি তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিকের আয়োজনে বিভিন্ন সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেন। প্রসেনজীৎ কুমার হালদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন চৈতি বসাক, মনীষ বাড়ৈ, সাজেন কৃষ্ণ বল, নোবেল সাহা, সোনামনি কর্মকার, পিযুষ দাস, অনুপম দাস, অঙ্কন কর্মকার, অনিক দাস প্রমুখ। এছাড়াও মানববন্ধনে কয়েকশ’ সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ উপস্থিত ছিলেন। প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন শেষে তারা শাহবাগের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যান।
বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সংবাদ সম্মেলন
সারাদেশে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের উপর নির্যাতন বন্ধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ।
বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সভাপতি দীপংকর শিকদার দীপুর সভাপতিত্বে ওই কর্মসূচীতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক অনুপ কুমার দত্ত, সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাড. গৌরাঙ্গ লাল মন্ডল, বিপুল বার, কেন্দ্রীয় মুখপাত্র সাজন কুমার মিশ্র, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুমন কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশিস সাহা, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অ্যাড. দুর্জয় দে সঞ্জয়, অ্যাড. বাসুদেব গুহ, দপ্তর সম্পাদক মুকুল ঘোষ, সহ-সাধারন সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকার, রূপম সরকার, যুব পরিষদের সভাপতি মনীষ বালা, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন কুমার শিপু, নারায়ন জেলা সভাপতি ইঞ্জিঃ উত্তম কুমার সাহা, বাংলাদেশ হিন্দু ছাত্র পরিষদ নেত্রবৃন্দ’সহ ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারন সম্পাদক এ্যাড. সুমন কুমার রায়।
এ্যাড. সুমন কুমার রায় বলেন, এই অরাজকতা অতি দ্রæত বন্ধে দেশবাসীকে আহবান ও বৈষম্যমুক্ত একটি দেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি আরো বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতন করে সংখ্যালঘুদের এই দেশ থেকে বিতাড়িত করা যাবে না। দেশ কারো বাপের না যে সংখ্যালঘুরা ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাবে। প্রয়োজনে সংখ্যালঘুরা তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় অস্ত্র ধরতে জানে। কারণ আমরা প্রীতিলতা ও মাস্টার দা সূর্য্য সেনের উত্তরসুরী।
দীপংকর শিকদার দীপু বলেন, ১৯৭১ সালের পর এই রকম অরাজাকতা পুনরায় দেখতে পাচ্ছি, যদি এই হামলা, লুটপাট মঠ-মন্দির প্রতিমা ভাংচুর, হত্যা, মারধর সহ্য করতে হয়, তবে আগের সরকারের দোষ কোথায়? আমরা কেন ঐক্যবদ্ধ হলাম, কোন আন্দোলন করলাম? কেন লাল রং উড়ালাম? এই প্রশ্নে উত্তর পাচ্ছি না।
সাজন কুমার মিশ্র বলেন, বিচারহীনতার প্রবনতার কারণেই আজ দেশের এই অবস্থা, গত ৪দিন ধরে চলমান যে তান্ডব চলছে, এগুলো বিচার যদি না হয়, তবে এদেশে শুধুরা নয়, এক সময় মুসলিমসহ সকল ভালো মানুষগুলো এদেশ ত্যাগ করবে এবং সন্ত্রাসী দুবৃত্তের অভয়ারোন্য হয়ে পড়বে আমাদের প্রিয় সবুজ শ্যামল মাতৃভ‚মি!