রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা ভবন জনতা ঘেরাও করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে অর্ধশত ব্যক্তি ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। সোমবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া সাভার থানা ঘেরাও করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে ৮ জন নিহত হন। উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করতে গেলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়।
গুলিস্তানে পুলিশ সদর দপ্তরের হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ সদর দপ্তরে রাখা কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া উত্তরা পূর্ব, ভাটারা, খিলগাঁও, কদমতলী, বাড্ডা, মিরপুর, আদাবর, লালবাগ, বংশাল, পল্লবী, মোহাম্মদপুরসহ অন্তত: ১৫ থানায় সোমবার বিকালে হামলা-ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। হামলার সময় পুলিশ গুলি করলে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। এরমধ্যে উত্তরাপূর্ব থানা এলাকাতেই গুলিবিদ্ধ কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে। যাত্রাবাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে পাঁচশতাধিক। তাদের অনেকে মারা গেছেন। সেখানে গণপিটুনিতে চার পুলিশ মারা যাওয়ার দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বাড্ডা থানায় আগুন ধরিয়ে দিলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে পুলিশের সাত সদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। খিলগাঁওসহ কয়েকটি থানার পুলিশ প্রাণ বাঁচাতে থানা ছেড়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
অপরদিকে, ঢাকার বাইরে সাভার থানাসহ বেশ কয়েকটি থানায় হামলা চালানো হয়েছে। কয়েকটি থানা জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। সোমবার বিকালে সাভার থানা ঘেরাও করলে পুলিশ গুলি করে। এসময় ঘটনাস্থলে ৮ জন নিহত হন।
যাত্রাবাড়ী ও চানখার পুল সংঘর্ষ ঃ সোমবার সকাল থেকেই পরিস্থিতি ছিল উতপ্ত। চানখার পুলে সাধারণ জনতা সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে ২ জন নিহত হয়। এরা হলেন রাসেল (২৮) ও অজ্ঞাত (৩০)। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ২০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গতকাল সকাল সোয়া ১০টা থেকে রাজধানীর শনির আখড়া, কাজলা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে থাকেন। শনির আখড়া থেকে বিক্ষোভ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ নিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যেতে থাকলে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে ধাওয়া করলে পুলিশ পিছু হটে যাত্রাবাড়ী মোড়ে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যার দিকে যাত্রাবাড়ীতে থানায় আগুন দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এসময় পুলিশ গুলি চালায়। এ ঘটনায় গতকাল রাত ৯ টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪১ জনের লাশ নথিভ‚ক্ত করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্র আব্দুর রহমান (২২), রাকিব (২২), মানিক মিয়া (২৫), সাইফুল ইসলাম তন্ময় (২২), আবু ইসহাক (৫২), আজমত (৪০), মোহন (২২), ইয়াসিন (২৪), শাহিন (২২), শাকিল (২১), আব্দুল নুর (৩০), ইসমাইল রাব্বি (২২), রনি (১৭), হামিদুর রহমান (২২), লিটন উদ্দিন (৩২), শাওন (১৪), রায়হান (২১), আব্দুল হান্নান (৫০) ও মনোয়ার (৫০)। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেরুল বাড্ডায় মূল সড়কে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন। সেখানে তারা ¯েøাগান দিতে থাকে। রামপুরা বিজ্রের কাছ থেকে পুলিশ এসে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। তখন বিক্ষোভকারীরা গলির ভেতরে ঢুকে যায়। সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর উত্তরায় বিএনএস সেন্টারের সামনে হাজারো আন্দোলনকারী রাস্তায় অবস্থান নেয়। বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কের দিকেও জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা।
১৫ থানায় আগুন ঃ রাজধানীর বাড্ডা, ভাটারা, আদাবর, খিলগাঁও, মিরপুর মডেল থানা ও উত্তরা পূর্ব থানায় আগুন ও হামলার ঘটনা ঘটে। রাত ৮ টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা মোহাম্মদপুর থানা ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এতে অন্তত ৫০ জন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় থানার অস্ত্র লুটের ঘটনাও ঘটে।
আদাবর থানায় হামলা করতে গেলে পুলিশ গুলি করে। সেখানে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংখ্যা কতো সেটা জানা যায়নি। থানা ছেড়ে পুলিশ সদস্যরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় লুটপাট করেছে।
খিলগাঁও থানা পুলিশ থানা ও নিজেদের রক্ষার জন্য প্রথমে আন্দোলনকারীদের গুলি করে পরে তারা টিকতে না পেরে থানা ছেড়ে চলে যায়। সেখানেও অনেকে হতাহত হয়েছে।
উত্তরা পূর্ব থানার সামনে রিজার্ভ ফোর্সের দুইশতাধিক পুলিশ সদস্যকে বাঁচার জন্য আকুতি জানান। পরে সেখানে জনতার সাথে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। জনতা পুলিশের অস্ত্রও লুট করে। রামপুরা থানায় বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে।