spot_img

ছাত্র-জনতার বিজয়, পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা, বোন রেহেনাকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে আগরতলা যান

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র এক দফা দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। পদত্যাগ করে বেলা আড়াইটার দিকে থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাত্রা করে। তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন। হেলিকপ্টারটি ভারতের আগরতলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। পরে সেখান থেকে তিনি একটি ফ্লাইটে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি গেছেন বলে ভারতের একাধিক গণমাধ্যম খবর দিয়েছে। তবে দিল্লিতে তিনি নির্বাসনে থাকছেন না। ততৃীয় কোন দেশে তিনি চলে যাবেন। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে রাস্তায় নেমে বিজয়োল্লাশ করেন লাখো জনতা। ঢাকার রাস্তা জনসমূদ্রে রূপ নেয়।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার বিজয় অর্জিত হয়েছে। রাস্তায় উল্লাস করতে নেমে এসছে শিশু-কিশোররাও। অনেকেই বলছেন, শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে দেশ আরেকবার স্বাধীন হয়েছে। তারা সম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের দায় শেখ হাসিনার উপর চাপিয়ে তার বিচারও দাবি করেন। রাস্তায় নেমে আসা সাধারণ মানুষ বলছেন, এ বিজয় জনতার। এ বিজয় সাধারণ মানুষের। রাজনীতিকরা যেটা পারেননি, ছাত্ররা সেটা করে দেখিয়েছে। ফলে নতুন করে দেশটাকে গড়ার কথাও বলছেন অনেকে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এ বছরের ১১ জানুয়ারি। এর আগে ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদে নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন হয় একতরফা, যেখানে বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এই নির্বাচন আগের রাতেই ব্যালটে সিল মারার ব্যাপক অভিযোগ ছিল। এ নির্বাচন ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পায়। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হন। তবে এ নির্বাচনও বিতর্কিত হয়। এতেও প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। নিজদলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করে ‘ডামি’ প্রতিদ্ব›িদ্বতার আয়োজন করা হয়। এ নির্বাচনটিকে বিরোধীরা ‘ডামি নির্বাচন’ বলে আখ্যা দেন। ছয় মাসের মাথায় ব্যাপক ছাত্র ও গণবিক্ষোভের মুখে তিনি পদত্যাগ করলেন।
সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে। এতে মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারবেন বলেও সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি- (ক) তিনি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন। অন্য মন্ত্রীদের পদের মেয়াদ নিয়ে সংবিধানের ৫৮ (৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলি-সাপেক্ষে তাহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন। ‘মন্ত্রী’ বলিতে প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত।
গত বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। এরপর ১১ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। ওই মন্ত্রিসভায় সদস্য ছিল প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ জন। পরে ১ মার্চ আরও সাতজন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা হয় প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৪ জন। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৫ জন মন্ত্রী ও ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পাঁচ বছরের জন্য মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। তবে এ মন্ত্রিসভা প্রায় সাত মাসের মাথায় বিলুপ্ত হলো।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পর দেশজুড়ে সংঘাত আর তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যুর মধ্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হলো। এদিকে সর্বাত্মক অসহযোগের মধ্যে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া জনতা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনও দখল করে নিয়েছেন। সেখানে পতাকা হাতে তাদের উল্লাসের স্বাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংসদ ভবনেও ঢুকে পড়ে জনতা। সেখানেও তারা উল্লাস করে।
সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনাকে বহনকারী সামরিক হেলিকপ্টারটি আগরতলায় উড়িয়ে নিয়ে যান এয়ার কমোডর আব্বাস। তিনি ১০১ স্কোয়াড্রনের সদস্য। এদিকে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে অর্ন্তবতীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, প্রতিটি হত্যা, অবিচারের বিচার হবে। সবার চেষ্টায় দেশে শান্তি ফিরে আসবে। স্বাধীনতা স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে নিহত হওয়ার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথম সরকার গঠন করেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু ক‚টনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে লিখেছে, শেখ হাসিনা ভারতে নয়, লন্ডনে আশ্রয় চেয়েছেন। তবে ভারতের দিল্লি হয়ে তিনি লন্ডনে যাবেন। সোমবার রাতটা হয়ত তারা দিল্লিতে থাকবেন। নিউজ এইটিন বলছে, শেখ হাসিনার ছোট বোনা শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যের নাগরিক। রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সংসদ সদস্য। যে কারণে তারা যুক্তরাজ্যে যেতে পারেন। আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি। তিনি সম্ভবত লন্ডনে যাবেন। তবে কয়েক দিন দিল্লিতে ‘সেফ হাউসে’ থাকতে হতে পারে তাদের। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দিল্লিতে থাকেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক তিনি। তারা সায়মা ওয়াজেদের বাসায়ও উঠতে পারেন বলে সূত্রের খবর।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ