প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ঠেকাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গণভবনে তাঁর সঙ্গে বসার আহŸান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।’ প্রধানমন্ত্রী আটক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন। আন্দোলনের সময় প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচারের আশ্বাস দেন তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার করা হবে’।
গতকাল শনিবার সকালে গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা চাইলে আমি এখনো আলোচনায় রাজি। তারা যে কোনো সময় (গণভবনে) আসতে পারে। দরকার হলে তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়েও আসতে পারে।’ বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিল করার ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সার্বজনিন পেনশন স্কিম ২০০৮ সালের আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। এরপর বহু সময় অনেক চিন্তাভাবনা করে এই সার্বজনিন পেনশন স্কিমটা আমরা চালু করেছি এবং সেখানে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা আমরা দিয়েছি।
কারো দাবির অপেক্ষা না করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারণ আমি চাই, যারা এর সঙ্গে জড়িত, সে পুলিশই হোক বা অন্য যে কেউই হোক- যারা অস্ত্রধারি ও জ্বালাও পোড়াওসহ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের সে সব ঘটনার তদন্ত ও বিচার হোক। শুধু ঢাকা নয়, যেসব জায়গায় এ ধরনের ধ্বংস্তত্মক কার্যকলাপ হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত করে যথাযথ বিচার হবে। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিতে আরো দুইজন জজ নিয়োগ দিয়ে তাদের কর্মপরিধি ও সময়টাও বাড়িয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, যাতে যথাযথভাবে এটার তদন্ত হয়। আমি চাই এ ধরনের অন্যায় বা হত্যাকান্ড যারাই ঘটাক, এর যথাযথ তদন্ত করে তার বিচার হবে। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের অবশ্যই বিচার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কন্ঠে বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলছি, হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত- সে যেই হোক অবশ্যই তার বিচার করা হবে এবং কারা জড়িত, তদন্ত করেই তা বের করা হবে।’ তিনি উদহারণ দেন, রংপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে (সাঈদ নামের শিক্ষার্থীর মৃত্যু)। যে পুলিশ সদস্য দায়ী তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। এ ঘটনার বিচার হবে। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে যারা ছাত্র বা পরীক্ষার্থী ছিল- তাদের সবাইকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর সাথে সাথে যেসব ছাত্ররা নিরীহ, যারা খুন ও ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িত নয়, আমি তাদেরকে মুক্তি দেওয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি এবং সেটা শুরু হয়ে যাচ্ছে। চিহ্নিত দোষী ছাড়া বাকীদের আমরা মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী আবারো আলোচনার আহŸান জানিয়ে বলেন, আমার সাথে যদি তারা বসতে চায়, তাহলে আমি বসতে রাজি। তারা যদি এখনও আসতে চায়, কথা বলতে চায় আমি তাদের সাথে কথা বলতে রাজি। তাদের আর কি কি দাবি বাকী আছে- আমি সেটা শুনতে চাই এবং যেটা আমার সাধ্যের মধ্যে সেটা আমি প‚রণ করতে চাই। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের দাবি দাওয়া আমরা মেনে নিয়েছি (কোটার দাবি প‚রণ)। এখন আরো কিছু আছে কিনা- সেটা আমি শুনতে চাচ্ছি এবং আপনাদের সামনে আমি বলতে চাচ্ছি। দেশবাসীরও জানা উচিত যে, আমি কখনোই আমার দরজা বন্ধ করিনি। গণভবনের দরজা খোলা। যখনই এই আন্দোলনকারীরা কথা বলতে চায়, আলোচনা করে সমাধান করতে চায় আমি তাদের সাথে নিজেই বসতে রাজি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. শফিকুর রহমান এমপি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। পেশাজীবি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে অধ্যাপক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়‚ন, অধ্যাপক ড. মো. নিয়ামুল হক ভ‚ঁইয়া, ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর এমপি, ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, অধ্যক্ষ একেএম ফজলুল হক, ইঞ্জিনিয়ার এস.এম. খাবিরুজ্জামান, এডভোকেট আব্দুর রহমান হাওলাদার, ইঞ্জিনিয়ার মো শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু), অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, এডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, খায়রুল আলম প্রিন্স, এস.এম মঞ্জুরুল হক ও মো. অহিদুল ইসলাম অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।