spot_img

৪৮ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন

কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া সহপাঠীদের মুক্তি চায় বিভিন্ন কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তারা হুমকি দিয়েছে, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মুক্তি ছাড়া তারা কোন পরীক্ষায় অংশ নেবে না। ইতিমধ্যে তারা ফেসবুকে এ নিয়ে প্রচারণাও চালিয়েছে। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশও করেছে।
আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত সব পরীক্ষা স্থগিত করে ১১ আগস্ট থেকে নতুন করে এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করেছে শিক্ষাবোর্ডগুলো। রুটিন প্রকাশের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি জানিয়ে বলছেন, একজন পরীক্ষার্থীও যদি জেলে থাকে, তবে তারা পরীক্ষায় অংশ নেবে না। বিয়ষটি আমলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের জামিনে সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়।
গতকাল গ্রেফতার হওয়া ৪৮ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। তাদের মধ্যে ৩৭ জন ঢাকা মেট্রোপলিটনের বিভিন্ন থানায় ও ৫ জন পরীক্ষার্থী ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া ঢাকার বাইরে সাতক্ষীরার আরো ৬ জন শিক্ষার্থী জামিন পেয়েছেন। এসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা কিংবা নাশকতার অভিযোগে মামলা করা হয়। এদিন পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপথ ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড আদালতে দাখিল করে পরীক্ষার্থী বিবেচনায় জামিনের আবেদন করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন থানার মামলায় জুডিসিয়াল রশিদুল আলম ও ঢাকা জেলার মামলায় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিরপুর মডেল থানার ছয়জন, শাহবাগ থানার পাঁচজন, উত্তরা পশ্চিম থানার পাঁচজন, পল্লবী ও যাত্রাবাড়ী থানার তিনজন রয়েছেন। এছাড়াও সাভার, আশুলিয়া, রূপনগর, ওয়ারী, লালবাগ, উত্তরা-পূর্ব, তুরাগ ও সবুজবাগ থানার দুইজন করে রয়েছেন। তাছাড়া চকবাজার, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ধানমন্ডি ও কদমতলী থানার একজন করে শিক্ষার্থী রয়েছেন।
আইনমন্ত্রীর উদ্যোগ: ছুটির দিনেও বসল কোর্ট, শিক্ষার্থীদের মিলল জামিন
মন্ত্রণালয় বলছে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিশেষ উদ্যোগে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও ঢাকার দুই আদালত থেকে ৪২ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী জামিন পেয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলমান সহিংসতা ও নাশকতামূলক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রুজু হওয়া মামলায় গ্রেপ্তারকৃত এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার কথা বিবেচনায় করে আইনমন্ত্রী তাদের জামিনের বিশেষ উদ্যোগ নেন। এজন্য তিনি শিক্ষার্থীদের দ্রæত জামিন দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে সারা দেশের প্রসিকিউশন টিমকে (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) নির্দেশনা দিয়েছেন। এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ছুটির দিনেও ঢাকা ও সাতক্ষীরার আদালত থেকে মোট ৪৮জন পরীক্ষার্থী জামিন পান।
এছাড়া শিক্ষামন্ত্রণালয়ের জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ঢাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পুলিশের হেফাজতে থাকা ৩ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী জামিন পেয়েছেন। অন্য কোন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর আটকের তথ্য থাকলে যবষঢ়যংপ২৪@মসধরষ.পড়স এ সকল তথ্য পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের আইনী সহায়তা দেবে শিক্ষামন্ত্রণালয়।
এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সা¤প্রতিক সহিংস ঘটনায় আটককৃতের মধ্যে যদি কেউ চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থী থাকে, তারা পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রাদিসহ জামিন আবেদন করলে তাদের জামিনে মুক্তিতে সরকার আইনি সহায়তা প্রদান করবে। আটককৃত যেসব ছাত্রদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ নেই তাদের জামিনের ক্ষেত্রেও সরকার আইনি সহায়তা প্রদান করবে।
ক্ষুদ্ধ এইসএসসি পরীক্ষার্থীরা : কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী গ্রেফতার হয়েছে। তবে কত শিক্ষার্থী গ্রেফতার রয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে এইচএসসি পরীক্ষার্থী গ্রেফতারে পরীক্ষার্থীরা ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। বলছেন, পরীক্ষার আগে এভাবে জেল হাজতে থাকলে কীভাবে তারা পড়াশোনা করবেন। পরীক্ষা খারাপ হলে কী সরকার দায় নেবে। এছাড়া এভাবে সহপাঠীদের জেলে থাকলে তারাও পরীক্ষা দেবেন না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ঢাকার উত্তরায় রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন কলেজের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক ও অভিভাবক। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বিক্ষোভের কারণে বন্ধ হয়ে যায় কলেজের সামনের সড়কের যান চলাচল।
সমাবেশে শিক্ষার্থী সাজ্জাদ বলেন, আমি এইচএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু আমি পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছি না। কারণ, পুলিশ আমার সহপাঠী ভাইকে কোনো প্রকার অপরাধ ছাড়া ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমরা আমাদের ভাইকে জেলে রেখে আর কোনো পরীক্ষায় বসতে পারব না।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমাবেশে অংশ নেন কলেজের অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক। তাঁরাও অনেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিচারের দাবিতে ¯েøাগান ধরেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেফতার হওয়া সাতক্ষীরার দুই শিক্ষার্থীকে কারাগারে বসে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এভাবে কেউ জেলে থেকে পরীক্ষার অনুমতি পেলেও আমরা পরীক্ষায় অংশ নেবে না।
এদিকে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, গত ১৮ জুলাই বিকেলে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে রাজধানীর ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দুই এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদের গত জানুয়ারি মাসে ফতুল্লা মডেল থানার নাশকতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা পুরোনো দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে। পরিবারের দাবি, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আটক করলেও তাঁদের পুরোনো নাশকতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আন্ত:শিক্ষাবোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, পাবলিক পরীক্ষার বিধিমালা অনুযায়ী কোন শিক্ষার্থী জেল হাজতে থাকলে আবেদন করলে তাকেও পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ