spot_img

খুলনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশ নিহত, পুলিশের গাড়িতে আগুন

খুলনায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে ফের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দীর্ঘ চার ঘণ্টাব্যাপী দুই পক্ষের সংঘর্ষে নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় শিক্ষার্থী ও পুলিশসহ অর্ধশত আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে সুমন নামে একজন পুলিশ সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আন্দোলনকারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। আহতদের মধ্যে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ছাত্র শফিক, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র আফরান, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ফাইয়াজ, নর্থ ওয়েস্ট বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র রাফিদ, সেন্ট যোসেফ স্কুলের ছাত্র মুগ্ধ, খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইউসুফ, স্কুল ছাত্র জাহিদুল (১৫), মাদ্রাসা ছাত্র সৌরভ (১৩), রনির (২০) নীরবের (২১) নাম জানা গেছে। আহতদের মধ্যে ছাত্রীও রয়েছে। আহতদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত একজন ছাত্রী, একজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০জনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, সংঘর্ষকালে পুলিশ ব্যাপক রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নগরীর গল্লামারী এলাকায় পুলিশের একটি গাড়ি আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়। এছাড়া বেশ কিছু দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। খুলনা মহানগরীর মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহতদের বিচার দাবিসহ ৯ দফা দাবিতে গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে নগরীর শিববাড়ী মোড়ে জড়ো থাকে। দুপুর ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নিউ মার্কেট ঘুরে কেডিএ মসজিদের সামনে দিয়ে গল্লামারীর দিকে রওনা দেয়। মিছিলটি সোনাডাঙ্গা থানার সামনে পৌঁছালে মিছিলের পেছন থেকে সোনাডাঙ্গা থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জান বলেন, শিক্ষার্থীরা কিছু ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিলেন। তবে কেউ আহত হননি। পরে শিক্ষার্থীদের বিশাল মিছিল নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পার হওয়ার সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘ একঘণ্টাব্যাপী পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-ধাওয়া পাল্টার ঘটনা ঘটে। এ সময় গল্লামারী মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে যায়। বিকাল সাড়ে ৪টায় শিক্ষার্থীরা নগরীর জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়। ৫টার দিকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ ব্যাপক রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে নগরীর গল্লামারী এলাকায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আগুন দিয়ে পুলিশের একটি গাড়ি জ¦ালিয়ে দেয়। এ ছাড়া বেশ কিছু দোকানপাট ভাঙচুর করে। সংঘর্ষকালে শিববাড়ী এলাকা, এম এ বারী সদক, সোনাডাঙ্গা, গল্লামারী, জিরো পয়েন্ট এলাকাসহ পুরো নগরীতে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে বাধা প্রদান, গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করেছে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নগরীর এম এ বারী সড়কের কাচা বাজার এলাকায় সংঘর্ষ চলছিল। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে রয়েছে। তাদেরও সাজোয়া যান নিয়ে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেখানেও টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এলাকাবাসীর সহযোগিতা চাইলেন খুবি শিক্ষার্থীরা
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়ে মাইকে ঘোষণা করেন, খুবির বেশ কিছু শিক্ষার্থী সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকায় আটকে পড়েছে। আপনারা তাদের উদ্ধার করে খুবি ক্যাম্পাসে পৌঁছে দিন। এছাড়া খুবির ৬জন ছাত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়ে খুলনা ক্যাম্পসে আটকা পড়েন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাদের সহপাঠীরা অ্য¥ম্বুলেন্স চেয়ে সহযোগিতা চান।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নগরী সাত রাস্তা মোড়সহ দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ