রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে তারা বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা তারা শুনেছেন। তবে এখনো অনেক ছাত্রসহ সাধারণ জনতাকে অবৈধভাবে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। তাদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অর্থনীতিবিদ ও জননীতি বিশ্লেষক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, মানবাধিকার নেত্রী শিরীন হক, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবির) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মির্জা তাসলিমা সুলতানা, বেসরকারি উন্নয়ণ সংস্থা উবিনীগ এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ নূর, সদস্য রুমি প্রভা।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে আটক ছাত্র শিক্ষক, সাধারণ মানুষ বিনাবিচারে আটক ও আইনানুগ ব্যবস্থা ছাড়া আটকদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এটা হচ্ছে আমাদের প্রধান দাবি। আমরা শুনেছি কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সম্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা খুশি, কিন্তু সন্তুষ্ট নই। কারণ এখনো ঢাকাসহ সারাদেশে আটক ছাত্র শিক্ষক, সাধারণ মানুষ বিনা বিচারে আটক আছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচারে মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি পুলিশ চাই না। আমরা বাংলাদেশের পুলিশ চাই। আপনার (পুলিশ) জনগণের জন্য কাজ করবেন। বাংলাদেশের পুলিশ হবেন।
তিনি বলেন, আমরা চাই তেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারা আমাদের কথা শুনবে। আপনারা বাংলাদেশ পুলিশ হবেন। আওয়ামী লীগ পুলিশ, বিএনপি পুলিশ, জাতীয় পার্টি পুলিশ হবেন না। এটাই আমরা চাই।
সামিনা লুৎফা বলেন, সারাদেশে অজস্র কারাগার গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা আটকের মাধ্যমে। জুলাইয়ে হত্যাকান্ডে যারা প্রাণ হারিয়েছে সেই আন্দোলনের হাজার হাজার ছেলে মেয়েকে বøক রেইড দিয়ে দিয়ে কারাগারগুলো ভরে ফেলা হয়েছে। এই অবস্থা আজকেই থামাতে হবে। সমন্বয়কদের যেমন ছেড়ে দিয়েছেন সকল শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের ছেড়ে দিতে হবে। সমস্ত দেশের নিরাপত্তা দেবার জন্য সরকারে বসেছেন। আমাদের সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত করার জন্য আপনাদের ওইখানে বসে রাখা হয়নি। সমস্ত কারফিউ তুলে নেবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমস্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তুলে নেবেন। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। মানুষের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। তা আটকে রাখার অধিকার আপনাদের কারো নেই।
মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, আমাদের অনেক শিক্ষার্থী কারাগারে। আটকে রাখা সকল শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিতে হবে।
আসিফ নজরুল, আমাদের সকল শিক্ষার্থীকে যদি ছেড়ে দেওয়া না হয়, যদি হত্যার বিচার করা না হয়, যদি অবিলম্বে শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়া না হয় তাহলে আমাদের বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আরও কঠোর ও অব্যাহত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
রুশাদ ফরিদী বলেন, আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকেল ৩টায় দ্রোহ যাত্রা নামে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশে ছাত্র শিক্ষক সুধী সমাজে অংশ গ্রহণ করবেন। এতোগুলো হত্যার বিচার চাই।
বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, অবৈধভাবে আটক ছয় শিক্ষার্থী যাতে স্বাধীন পরিবেশে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।