গত ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউনে ঢাকাসহ সারা দেশ স্থবির হয়ে পড়ে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করায়। শুরু হয় সংঘর্ষ। এর জের ধরে সম্পূর্ণ অসহিংস আন্দোলনটি রূপ নেয় স্মরণকালের সবচেয়ে সহিংস আন্দোলনে।
প্রথমে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। তাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সবার সমর্থনের কারণে দেশব্যাপী সাড়া ফেলে। এটিকে আরও বেগবান করতে তারা বিভিন্ন নতুন পরিকল্পনা সাজায়। পাশাপাশি আঁকা হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ছক, যা সাধারণ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ধারণারও বাইরে। তারা ঘুর্নাক্ষরেও টের পায়নি কিভাবে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে চলেছে তারা।
শিক্ষার্থীদের আপাতত শুভাকাঙ্খী হিসেবে আন্দোলনে মিশে যায় তারা। দ্রæতই আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে তাদের উস্কে দিতে থাকে। একই সাথে চ‚ড়ান্ত করে ফেলে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে এটিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার পরিকল্পনা।
এক পর্যায়ে আন্দোলনে বর্বরতা দেখে শিক্ষার্থীরা এই সহিংসতার সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই বলে জানায়। ততক্ষণে এই আন্দোলনের নিয়ন্ত্রন চলে যায় বিরোধী শক্তির হাতে। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মিশনে নেমে পড়ে। তারা নাশকতা চালায় ঢাকা শহরে যানযটে অতিষ্ঠ নগরবাসীর স্বস্থির প্রতীক মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হানিফ ফ্লাইওভার, বিআরটিএ, সেতুভবন, বেসরকারি ডাটা সেন্টার, বেপজা ভবন, পুলিশ স্টেশনসহ সরকারি বিভিন্ন সেবা সংস্থায়। সেখানে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়ে ঢাকাকে পরিণত করে গুজবের এক আতঙ্কের নগরীতে।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ১৩টি স্পটসহ ২০টি স্পটে পরিকল্পিত নাশকতা চালায় বিরোধী এই শক্তি। ঢাকাকে সারাদেশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দিতে দেশের লাইফ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, বসিলা-কেরানিগঞ্জ, ঢাকা-মাওয়া ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কগুলোর ঢাকার প্রবেশমুখে সহিংসতা ও নাশকতা চালিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারা ঢাকার চারপাশে গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, বসিলা ও নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়ে ঢাকাকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করে। একই সাথে ঢাকার অভ্যন্তরে উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বনানী, মহাখালী, মগবাজার, রামপুরা, গ্রিনরোড, যাত্রাবাড়ি ও শনিরআখড়ায় চালায় নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ।
অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি বাংলাদেশের আন্তজার্তিক ফ্লাইট পরিচালনা ব্যহত করতে বিমানে জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহৃত জেট ফুয়েলের সরবরাহ বিঘিœত করার পরিকল্পনা করে। তাই জেট ফুয়েল ডিপো থেকে জ¦ালানি যেন হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসতে না পারে সেজন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শনির আখড়া থেকে সাইন বোর্ড এলাকায় সড়ক অবরোধের মাধ্যমে ব্যাপক সহিংসতা চালায়।
দুর্বৃত্তরা দেশের সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিতে অগ্নিসংযোগের পর এটির আর্কাইভ ধ্বংসের অপচেষ্টা চালায় যেন সেখানে রক্ষিত দেশের অভ‚্যদয়ের ইতিহাসের তথ্য মুছে ফেলা যায়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাঝে ভীতি সঞ্চার করতে তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থানা ও পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করে। তাদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে দেশব্যাপী বিভিন্নস্থানে চালানো হয় নৃশংস হামলা। হত্যার পর বর্বরোচিতভাবে দীর্ঘক্ষণ ঝুলিয়ে রাখা হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্যের লাশ। রাজনৈতিক দলের একজন কর্মীর লাশও ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই ছবি এবং তথ্য তারা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর করে গুজব ছড়িয়ে দেয়। এই সহিংসতার মধ্যে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন কারাগারে হামলা চালানো হয়। নরসিংদী কারাগারে কারারক্ষীদের অস্ত্র লুটসহ পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয় ৮ শতাধিক কয়েদিকে।