সরকারী চাকরির সকল গ্রেডে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। আন্দোলনকারীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় পুরো ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মলচত্বর এলাকায় এই হামলার সূত্রপাত। ছাত্রলীগের হামলার মুখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে ও দ্রæত ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। হামলার সময় নারী শিক্ষার্থীদের বেধরক পিটিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের উপর গুলির ঘটনাও ঘটেছে। বিস্ফোরণ হয়েছে অন্তত ১০টি ককটেল। এই ঘটনায় আন্দোলনরত প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানান ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। হামলার বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ইত্তেফাককে বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়কে রাজাকারের হাত থেকে মুক্ত করতে দেশের সচেতন তরুন সমাজ এগিয়ে এসেছে।’
এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হলে সেখানেও দেশীয় অস্ত্র, চাপাতি নিয়ে ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে পৌনে সাতটা পর্যন্ত। এখানে হামলাকারীদের অধিকাংশই হেলমেট পড়ে হামলা চালায়। এদের অধিকাংশ ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের কর্মী। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে সরেজমিন দেখা যায়, ছয়জন আহত শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে। এসময় সূর্যসেন হল ও মহানগর ছাত্রলীগের বহিরাগতদের নিচে অবস্থান করতে দেখা যায়। তাদের সবার হাতেই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দেখা যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে আহত শিক্ষার্থীরা হসপিটালের তিন তলার দরজা বন্ধ করে রাখে ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার বলেন, ‘আমরা কখনো ভাবি নাই, ছাত্রলীগ এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করবে। আমরা নারী শিক্ষার্থীরা অনেকে দৌঁড়ে পালাতে পারি নাই। ছাত্রলীগের কর্মীরা হেলমেট পরে আমাদেরকে বেধড়ক মারধর করেছে, লাঠিপেটা করেছে। নিজের ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীরা কতটা অসহায়, ছাত্রলীগ আজকে প্রমাণ করল।’ আরেকজন নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের উপর গরম পানি ও মরিচের গুড়াও ছিটিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। গরম পানিতে একজন নারী শিক্ষার্থীর শরীরের একটা অংশ পুড়ে গেছে।’
সোমবার দুপুর ১২ টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কোটা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, ইডেন কলেজ সহ আসেপাশের কলেজের শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে জামায়েত হন রাজু ভাস্কর্যের সামনে। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনের মতই মিছিল নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের হল প্রাঙ্গণ ও ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করতে যান। এসময় বিজয় ৭১ হলের ভিতর থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হল গেট ভাঙচুর করেন। একই সময় শিক্ষার্থীদের মিছিলের একটি অংশের উপর মাস্টার দা সূর্যসেন হল থেকেও ছাত্রলীগের নেতারা তাদের ইট-পাটকেল মারতে থাকেন। দুই গ্রæপের মধ্যে কিছুক্ষণ উত্তেজনা বিরাজ করেন। কবি জসীম উদ্দিন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও বিজয় একাত্তর হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উপর্যুপুরি মারধর করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা মলচত্বরে অবস্থান নেন।
এদিকে বিকাল ৩ টায় পূর্বঘোষিত ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমান’ কর্মসূচি পালন করতে দুপুর ১২টা থেকেই মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। তবে মধুতে সরেজমিন ঘুরে বহিরাগত এবং ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের কর্মীদের উপস্থিতি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এর আগে কয়েকটি বাসে করে বগিরাগত ও মহানগরের ছাত্রলীগ কর্মীদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপরা হামলা করতে বহিরাগতদের আগে থেকেই ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে। ছাত্রলীগের নির্দেশেই বগিরাগতরা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে।
এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মলচত্বরে অবস্থান করতে দেখে মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বহিরাগতরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ শিক্ষার্থীদের দিকে দৌড়ে হামলা করতে আসে। এসময় স্ট্যাম্প, লাঠি, বাশের টুকরা, কাঠের টুকরা, হকস্টিক, স্টিলের পাইপ হতে হামলাকারীরা শিক্ষার্থীদের দিকে দৌঁড়ে যান। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা ছিলেন খালি হাতে। হামলাকারীরা লেকচার থিয়েটার ভবন থেক ইট-পাটকেল মারতে মারতে শিক্ষার্থীদের দিকে এগিয়ে যান। শিক্ষার্থীরা সেই ইট-পাটকেল কুড়িয়ে আবার ছাত্রলীগের দিকে মারতে থাকেন। এরকম কিছুক্ষণ দুইপক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। এরপরই হামলাকারীদের পাটের বস্তা থেকে হকস্টিক, স্টিলের পাইপ, প্লাস্টিকের পাইপ বের করে শিক্ষার্থীদের দৌঁড়ে গিয়ে হামলা করেন। শিক্ষার্থীরা হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
শুধু মলচত্বর নয় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত মোড়, পলাশী বাজার মোড়ের দিকে শিক্ষার্থীরা পালাতে শুরু করলে সেখানেও বহিরাগতরা লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীর হামলা করেন। এদিকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ক্যাম্পাসের এক শিক্ষার্থীকে পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে পেয়ে পিটুনি দেয় মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়াও শিক্ষার্থী পেলেই মারধর করা হচ্ছে । শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও রাজিবুল ইসলাম বাপ্পির নেতৃত্বে দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আর বহিরাগতদের নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায় ক্যাম্পাসজুড়ে। এ সময় সবার হাতে মোটা কাঠ, স্টিলের পাইপ, হকিস্টিক ছিল। এরপর এসে তারা রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তারা রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করছিলেন।
হামলা থেকে রেহাই পায়নি নারী শিক্ষার্থীরা : হামলা থেকে রেহাই পায়নি আন্দোলনে আসা নারী শিক্ষার্থীরা। মলচত্বরে হামলার আকস্মিকতায় মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মেয়েদের নিয়ে ভিসি চত্বরের দিকে পিছিয়ে আসতে শুরু করেন। ভিসি চত্বরে নারীদের দৌঁড়ে গিয়ে লাঠি, স্টাম্প ও হকস্টিক দিয়ে বহিরাগত ও ছাত্রলীগকে আঘাত করতে দেখা যায়। সরেজমিন দেখা যায়, ধাওয়া খেয়ে নারী শিক্ষার্থীরা ভিসি চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বাসের পাশে অবস্থান করেন। এসময় ছাত্রলীগ ও বহিরাগতরা লাঠি, বাঁশ, স্ট্যাম্প ও হকস্টিক দিয়ে এলাপাতাড়ী নারী শিক্ষার্থীদের আঘাত করে। এতে অন্ত ৫/৬ জন নারীর মাথা ফেটে রক্ত বের হতে দেখা যায়। এ সময় ভিসি চত্বরে বিআরটিসি বাসে আত্মরক্ষার্থে উঠে পড়েন ব্যাপক নারী শিক্ষার্থী। তাদেরকেও বাস থেকে নামিয়ে এনে পেটাতে থাকে তারা। ফলে অনেক মেয়ে ব্যাগ, ছাতা ফেলে কোনোমতে দৌঁড়ে পালাতে থাকেন। কেউ ফুলার রোড হয়ে শহীদ মিনারের দিকে, কেউ পলাশীর দিকে, কেউ নীলক্ষেতের দিকে পালিয়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৬ ব্যাচের ছাত্রী তানজিলা তাসনীম বলেন, ‘ভিসি চত্বরে মৈত্রী হলের এক মেয়ের হাতে ইটপাটকেল লাগার কারণে নড়তে পারছিল না। ফলে আমি ওকে ছেড়ে আসতে পারিনি। এ সময় হেলমেট পরা কয়েকজন এসে আমাদের সরে যেতে বলেছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। আমি বলেছিলাম, আমি জাস্ট যৌক্তিক আন্দোলনে ছিলাম। তারপর উনি আমার ডান হাত মুচড়ে দিয়েছে। আমরা এখন ওই মেয়েকে নিয়ে মেডিকেলে এসেছি। আমার খারাপ লাগছে, নিজ ক্যাম্পাসে এভাবে হামলার স্বীকার হয়েছি।’
এদিকে ভিসি চত্বরে মাথা ফাটলে এক শিক্ষার্থী চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল রওনা দেন। তিনি রিক্সায় উঠার সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তখন সংবাদকর্মী কয়েকজন তাকে ধরে রিক্সায় তুলে দেন।
শহীদুল্লাহ হলের সামনে ককটেল বিষ্ফোরণ, গুলি : রাজু ভাস্কর্য থেকে কার্জন হল এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ ও বহিরাগতরা। সেখানে সাইন্সের হলগুলোতে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর তারা হামলা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। জানা যায়, সায়েন্সের হলগুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কোটা আন্দোলনের পক্ষে। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সেখানে ব্যাপক ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, বহিরাগতদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এমনকি সেখানে ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এসময় ১০টি ককটেল বিস্ফেরণ হয়। সেখানে অস্ত্র হাতে একজনকে গুলি করার দৃশ্য দেখা যায়। তবে গুলিতে কেউ হতাহত হয়েছে কিনা জানা যায়নি।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেছেন, ‘শিবির এবং ছাত্রদলের চিহ্নিত ক্যাডাররা হলে ঢুকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে। এই হামলার বিচার না হলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর কড়া জবাব দেবে।’ কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের তারা বেধড়ক পিটিয়েছে। এই হামলা অন্তত তিন শত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘ওরা সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, তারা বিএনপির ইশরাকের কর্মী। আপনারা গণমাধ্যম অন্ধ হয়ে গেছেন। এই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থী ১০ থেকে ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ শিবির-ছাত্রদলের এক্টিভিস্ট।’
সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পাসের চারদিকে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে দোয়েল চত্বর এলাকায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের একটি গ্রæপ এবং পুলিশের সাঁজোয়া যান অবস্থান করতে দেখা গেছে।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে প্রভোস্ট কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশ^বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিশ^বিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে সার্বক্ষণিকভাবে হলে অবস্থান করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। হলগুলোতে কোনো বহিরাগত অবস্থান করতে পারবেন না। যেকোনো ধরনের গুজব ও অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহŸান জানানো হয়েছে। সকলকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়েছে। কেউ নাশতকতামূলক কাজে জড়িত হলে বিশ^বিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।