spot_img

কোটা সংস্কার আন্দোলন ২৪ ঘন্টার মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চান শিক্ষার্থীরা

সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোটা সংস্কারে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চান। ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ না এলে তারা কঠোর কর্মসূচি দেবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন। একই সময়ের মধ্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে অজ্ঞাতনামা মামলাও প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আদিল চৌধুরীর কাছে স্মারকলিপি দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
স্মারকলিপি দেওয়ার পর এসে আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের কাছে আমরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে জরুরি অধিবেশন আহবান করার জন্য সুপারিশ করেছি। আগামী ২৪ ঘন্টায় দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাই।
নাহিদ আরো বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, কোটা সংস্কারের দায়িত্ব সরকারের বা নির্বাহী বিভাগের। আমরা চাচ্ছি আইন সভার মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন। আমরা সব দরজায় যাচ্ছি। সরকার প্রথম থেকে বিষয়টি সমাধান করলে আমরা আর রাজপথে থাকতাম না। আগামী ২৪ ঘন্টা আমরা সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের পদক্ষেপ দেখে পরবর্তী কর্মসূচি দেব।


তিনি আরও বলেন, আমাদের দমন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তা হতে দেইনি। আমাদের নামে শাহবাগ থানায় যে অজ্ঞাত মামলা দেওয়া হয়েছে তা প্রত্যাহারের জন্য আমরা আরো ২৪ ঘন্টা আল্টিমেটাম দিচ্ছি। তা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমরা আমাদের স্মারকলিপি রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের কাছে পৌঁছে দিয়ে এসেছি। আমাদের স্মারকলিপি তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। আমাদের দাবি ছিল, অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ কোটা রেখে সংসদে আইন পাশ করার জন্য জরুরি সংসদ অধিবেশন ডাকার কথা বলেছি। আমরা আশাকরি, রাষ্ট্রপতি অতিসত্বর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এর আগে গতকাল সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রত্যাশী। এ সময় সদরঘাট থেকে মিছিল নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে। বেলা ১২ টায় পদযাত্রা নিয়ে বঙ্গভবন অভিমুখে ভিসি চত্বর, রাজু ভাস্কর্য, শাহবাগ দিয়ে তারা রওনা হন।
এক পর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাজিরুর রহমানসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা। তবে শিক্ষার্থীরা কিছুক্ষণ পর পুনরায় রওনা হন।
প্রেসক্লাবের সামনের মোড়ে পৌঁছানোর পর আবার পুলিশ বাধা দিয়ে ঘুরে শিক্ষাভবনের দিকে যেতে বলেন। এ সময় সমন্বয়কদের সহায়তায় পদযাত্রা শিক্ষাভবন মোড়ের দিকে ঘুরে রওনা হন। সেখানেও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা বেলা দেড়টার দিকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে গিয়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। পদযাত্রাটি শাহবাগ মোড়ে হয়ে সামনের দিকে যাওয়ার সময় আশেপাশের রাস্তাগুলোয় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে কর্মব্যস্ত এলাকা গুলিস্তান।
মিছিলটি গুলিস্তান জিরোপয়েন্টে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে পড়লে তীব্র যানজট তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যে উদ্দেশে রওনা হওয়া লোকজন। সেখানে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।


প্রায় আধাঘন্টা সেখানে অবস্থান করার পর শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে ‘ভুয়া, ভুয়া’ ¯েøাগান দিয়ে পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙ্গে পাতাল মার্কেট সংলগ্ন গুলিস্তান মোড়ে এগোলে চূড়ান্ত পুলিশি বাধায় পড়েন শিক্ষার্থীরা। এখানে দুটি সাঁজোয়া যান, জলকামানসহ ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সামনে না এগিয়ে গুলিস্তান মোড়েই অবস্থান করার আশ্বাস দেন পুলিশকে এবং ১২ জনের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশের প্রহরায় ২ টা ৪০ মিনিটে বঙ্গভবনে যান। প্রায় ২০ মিনিট পর স্মারকলিপি দিয়ে তারা বিকেল তিনটায় ফিরে আসেন। এরপর বেলা সাড়ে তিনটার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান মোড়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন শিক্ষার্থী। তারা হলেন নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদ, আব্দুল হান্নান মাসউদ, রাশিদুল ইসলাম রিফাত, আব্দুল কাদের, মো. মাহিন সরকার, হাসিব আল ইসলাম। এ ছাড়া ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেহেরুন নিসা নিদ্রা, ইডেন কলেজের সুমাইয়া আক্তার, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৌহিদ আহমেদ আশিক।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা পদযাত্রা শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি তুলে দেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ, সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং বরিশাল মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলামের কাছে স্মারকলিপি দেয়। শিক্ষার্থীদের পদযাত্রার কারণে নগরীর জিলা স্কুল মোড়, কাকলী মোড়সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পদযাত্রায় শিক্ষার্থীরা কোটা বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।
শান্তিপূর্ণ গণপদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন আন্দোলনরত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে নগরীর কাজলা, তালাইমারি, সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট ও সিএন্ডবি অতিক্রম করে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের কাছে স্মারকলিপি তুলে দেন।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরির কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এর আগে মুক্তমঞ্চের সামনে এসে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা গণ পদযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণপদযাত্রা বের হয়। শিক্ষার্থীরা নগরীর টাউন হলে একত্রিত হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। সেখানে জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসানকে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), চবি অধিভুক্ত কলেজ, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিকেল কলেজের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর ষোলশহর স্টেশন থেকে গণপদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পদযাত্রাটি দুই নম্বর গেইট, জিইসি, ওয়াসা, কাজির দেউড়ি, লাভ লেইন হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ করেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ব্যারিকেড দিলে শিক্ষার্থীদের পাঁচ থেকে সাতজনের একটি প্রতিনিধি দল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল মালেকের কাছে স্মারকলিপি দেন।
সিলেট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর আগে গতকাল সাড়ে ১১টায় শাবিপ্রবির গোল চত্বর থেকে রওনা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, মদিনা মার্কেট, সুবিদবাজার, লামাবাজার, খুলিয়াপাড়া, জিতুমিয়ার পয়েন্ট ,তালতলা পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে দীর্ঘ ৮ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌছান শিক্ষার্থীরা।
ঝিনাইদহের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহরের উজিরআলী হাইস্কুল মাঠে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিপ করে। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়।
গতকাল সমাবেশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংহতি সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
গত ১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে রয়েছেন। ২ জুলাই থেকে শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি, বাংলা বøকেড কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি হলো, সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া/অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম (সর্বোচ্চ ৫শতাংশ) রেখে আইন পাশ করতে হবে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ