বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, পাস হওয়া নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেট বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে যতœ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রী ও সচিবদের মাধ্যমে এ নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সকালে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সভার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। সেটি হলো সবাই যেন খুব যতেœর সঙ্গে ও নজরদারির মধ্য দিয়ে বাজেট বাস্তবায়নে মনোযোগ দেন। নিপুণতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে যেন বাজেট বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে দেশে তৈরি পণ্য ও সেবা রপ্তানির মাধ্যমে ১১০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য নিয়ে ২০২৪ থেকে ২০২৭ মেয়াদের খসড়া রপ্তানি নীতিমালার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে রপ্তানি নীতিমালা করা হয়েছে, যাতে নতুনভাবে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব বাড়াতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি ও রপ্তানি বাড়াতে প্রয়োজনীয় সহায়তা বাড়াতে তাগিদ দিয়েছেন। উন্নয়নশীল দেশ হলে বিশেষ কিছু সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ তাই বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং শাক-সবজি ও ফল আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির ব্যবস্থা গ্রহণে গুরুত্ব দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। রপ্তানি নীতিমালা অনুযায়ী পণ্যের গুণগত মানে যাতে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া না হয়, তাও নিশ্চিত করতে বলেছেন।
সচিব জানান, বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিন বছর পর যাতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ১১০ বিলিয়ন ডলার ধরা হয়। এখন প্রতি বছর রপ্তানি হয় ৭০ বিলিয়ন ডলারের মতো।
উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গেলে যেসব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে সেদিকে বিশেষ নজর দিয়ে রপ্তানি নীতিমালা করারও নির্দেশনা দিয়েছেন ।
নিজের নামে প্রতিষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ‘না’
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি আইন ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে উপস্থাপিত শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (শিফট) আইন-২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের জন্য সভায় উপস্থাপিত হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বললেন এটি তার নামে হবে না। এটি থেকে শেখ হাসিনা নাম বাদ দিয়ে ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি আইন-২০২৪ এই নামে অনুমোদিত হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটির একটি গভর্নিং বর্ডি থাকবে এবং একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক থাকবেন। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ইনস্টিটিউটটি মূলত আইসিটি সংক্রান্ত প্রযুক্তি, গবেষণা, প্রযুক্তি উৎপাদন, গবেষণায় প্রশিক্ষণ প্রদান এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এটি হবে মাদারীপুরের শিবচরে।
পদ্মা সেতু পরিচালনায়
কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে
পদ্মা সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে একটি শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে। গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘পদ্মা ব্রিজ অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স কোম্পানি পিএলসি’ শিরোনামে শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
কোম্পানির মূল উদ্দেশ্য হলো ধীরে ধীরে আমাদের আওতায় নিয়ে আসা। বর্তমানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে থাকা চুক্তি শেষ হওয়ার পরই কোম্পানি বাস্তবায়ন হবে।
মো. মাহবুব হোসেন বলেন, কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন হবে এক হাজার কোটি টাকা। কোম্পানির মূল দায়িত্ব থাকবে পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ। কোম্পানির ১৪ জনের বোর্ড অব ডিরেক্টর থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রেল মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ ও সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে প্রতিনিধি থাকবেন। কোম্পানি আইন অনুযায়ী তারা চলবে এবং জনবল কাঠামো তারা অনুমোদন দেবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, প্রশাসনসহ প্রত্যেকেই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সবসময়ই সহযোগিতা করছে । সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি নিয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে আপনার বক্তব্য কী ? মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুর্নীতি তো সবাই করে না। একটি অফিসের সবাই কি দুর্নীতিবাজ? হাতেগোনা কয়েকজন করে এবং ওই হাতে গোনা কয়েকজনের জন্য বাকি সবাই বিব্রত হয়।
তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে তো অবস্থানটি পরিষ্কার করা হয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে কোনোরকমের কোনও সহানুভ‚তির দৃষ্টিকোণ দেখানো হবে না এবং দেখানো হচ্ছে না। যখনই এ বিষয়টি সরকারের নজরে আসে সরকারের তরফ থেকে কোনও প্রশ্রয় দেওয়া হয় না।