রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজানে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহতম জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিদেশী ক‚টনৈতীক ও স্বজনরা। অনেকে প্রিয়জনের স্মরণে চোখের অশ্রæতে দ্রæত সময়ের মধ্যে আসামিদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। হলি আর্টিজানে দেশি-বিদেশি ২০ জন নাগরিকসহ দুই জন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যার ৮ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গতকাল সোমবার এই শ্রদ্ধা জানানো হয়। একইসঙ্গে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, অনলাইনে তৎপরতা মোকাবেলায় চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাংলাদেশে আর কখনোই জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না। হলি আর্টিজানের পর জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ দমনে বাংলাদেশের ভ‚য়সী প্রশংসা করেছেন বিদেশী ক‚টনৈতীকরা।
জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইতালির রাষ্ট্রদূতরা। ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা এবং জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরিসহ অন্য ক‚টনীতিকরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। হামলায় নিহতদের প্রতি তারা ক‚টনৈতিক পুলিশ সদর দপ্তরেও শ্রদ্ধা জানান। এছাড়াও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম, র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামানসহ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ফল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
গুলশানের দীপ্ত শপথ ভাস্কর্যে হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেছেন, জঙ্গিরা একটি ভুল মতাদর্শ নিয়ে কাজ করে। ফলে এটি দমন করা অনেক লম্বা সময়ের বিষয় ও জটিল প্রক্রিয়া। এই মতাদর্শ এখনো রয়েছে। তাই তারা অনলাইন ও বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য, গবেষণা ও ক্ষেত্রবিশেষে অভিযান পরিচালনা করছে। জঙ্গিবাদ এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আছে।
তিনি বলেন, ৮ বছর আগে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। এদিনে দুই পুলিশ সদস্যসহ বিভিন্ন দেশের বিদেশি নাগরিকরা নিহত হয়েছিলেন। এটি শুধু বাংলাদেশে নয় আন্তর্জাতিক বিশ্বেও এটি আলোচিত ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। তারা মনে করেছিল এই জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আরো জঙ্গি হামলা দিয়ে বাংলাদেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে বলে অনেকে ভেবেছিল। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা সর্বাত্মক অভিযানে নামি। গোয়েন্দা তথ্যে অভিযানের পাশাপাশি সচেতনতাসহ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নানা কৌশল নেই। হলি আর্টিসানের পরপরই শোলাকিয়াতে একটি হামলা হয়। এরপর থেকে জঙ্গিরা ছোট কিংবা বড় কোনো হামলা করতে পারেনি।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে র্যাবের ডিজি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এখন আর সেভাবে জঙ্গি তৎপরতার তথ্য নেই। জঙ্গিবাদ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে এখন নিরাপদ একটি দেশ। জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম আদালত থেকে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ বলেন, সার্বক্ষণিক জঙ্গিদের বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিরা এক সময় নানা প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করেছে। জঙ্গিরা ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করেছে এক সময়। আমরা এসব বিষয়েও নজরদারি করছি। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডেও নজরদারি রয়েছে। আমরা মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই এই দেশে আর কখনোই জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের উত্থান হবে না।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, অনলাইনের মাধ্যমে অল্প সময়ের ভেতরে অল্প খরচে বেশি মানুষকে সংক্রমিত করা যায়। এ ক্ষেত্রে পুলিশের তৎপরতার পাশাপাশি সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারীতে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিক, পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জনকে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতী) সদস্যরা। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় ৫ জঙ্গি। বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ওই ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালত তার রায়ে ৭ আসামিকে মৃত্যুদÐাদেশ ও একজনকে খালাস দেন। পরে ২০১৯ সালের নভেম্বরে উচ্চ আদালত ৭ আসামির মৃত্যুদÐাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাবাস দÐ দেন।