spot_img

মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ, অর্থ লুটে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা, জানতে চান হাইকোর্ট

সব প্রক্রিয়া শেষে চ‚ড়ান্ত ছাড়পত্র নিয়েও ১৬ হাজার ৯৭০ কর্মী মালয়েশিয়া যেতে না পারায় যে কোটি কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে, এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী সাতদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়কে আদালতে এ সংক্রান্ত তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে গতকাল রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন দুই আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ ও বিপ্লব পোদ্দার। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন বিপ্লব পোদ্দার। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। এর আগে ৩০ হাজারেরও বেশি যুবককে মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকা লুটে নেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট করা হয়। অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ এ রিট করেন।
আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, ঘটনার এক মাস অতিবাহিত হলেও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়ায় এই রিট করা হয়। তিনি বলেন, দৈনিক ইত্তেফাকের একটি প্রতিবেদনে কত টাকা লুট হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনটি আমরা রিটে যুক্ত করে আদালতে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছি।
গত ২ জুন ইত্তেফাকে ‘৩০ হাজার যুবকের স্বপ্ন ভেঙ্গে, ২০ হাজার কোটি টাকা লুট’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে ভুক্তভোগীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আদনান রহমান (২৮)। বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর। মায়ের গহনা আর মাঠের ২০ শতক জমি বিক্রি করে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন এজেন্সিকে। এর মধ্যে কিছু ধারও আছে। স্বপ্ন ছিল মালয়েশিয়ায় গিয়ে পরিবারের ভাগ্য ফেরাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এজেন্সীর প্রতারণায় যাওয়া হয়নি তার। স্বপ্ন ভেঙেছে, পথে বসে গিয়েছেন। বিমানবন্দরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার সামনে শুধুই হতাশা। শুধু আদনান নয়, তার মতো ৩০ হাজারেরও বেশি যুবকের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। তারা পথে বসেছেন। আর এজেন্সির নামে হাতে গোনা কয়েকজন লুটে নিয়ে গেছে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা।
দুই দিন পর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে অব্যবস্থাপনার দায় দুই দেশের সরকারকে দিয়েছেন শীর্ষ রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসায়ী ও রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার নেতারা। সংসদ সদস্যরাও এজেন্সি বাছাইয়ের দায় মালয়েশিয়া সরকারের ওপর চাপালেন। শেষ সময়ে কর্মী যেতে না পারার দায়ও মালয়েশিয়ার সরকারের দিকে ঠেলে দিলেন ব্যবসায়ীরা। ওই সংবাদ সম্মেলনে বায়রার সাবেক মহাসচিব ও মালয়েশিয়া চক্রের আলোচিত ব্যবসায়ী রুহুল আমিন ওরফে স্বপন বলেন, ‘যেতে পারেননি, এমন প্রকৃত কর্মীর সংখ্যা ৫ থেকে ৬ হাজার হবে। এর বেশি কোনভাবেই হবে না। তারাই মূলত ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের অভিবাসন খরচ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আবেদন করলে মূল এজেন্সির কাছ থেকে টাকা ফেরত নেওয়া হবে।’ যদিও প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী নিজে বলেছেন, নিবন্ধন করে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি ১৬ হাজার ৯৭০ জন। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থদের অভিবাসনের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তই হয়নি।
কেন এত যুবকের স্বপ্ন ভঙ্গ হল? এর দায় আসলে কার? জানতে চাইলে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের প্রধান শরিফুল হাসান তখন বলেছিলেন, ‘এর দায় সবার। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। মার্চেই তো তারা জানিয়ে দিয়েছিল, ৩১ মের পর কোন শ্রমিক নেবে না। তাহলে এতদিনেও আমরা কেন ব্যবস্থা করতে পারিনি। অন্যদিকে বিমান মন্ত্রণালয় বলছে, তারা কিছুই জানে না। আবার মালয়েশিয়া সরকারেরও দায় আছে। তারা একেক সময় একেক নীতি নিচ্ছে। ফলে পুরো মার্কেটটা সিন্ডিকেটের হাতেই থাকছে। আগে যেখানে নিয়ন্ত্রণ করতেন ৮-১০ জন, এখন সেটা বেড়ে ২৫ জনের মতো হয়েছে। আর সারা বিশ্বেই ভিসার মেয়াদ থাকলে শ্রমিকরা যেতে পারেন, শুধু তারা দিনক্ষন বেঁধে দেন, এটা ঠিক না।’
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, গত ২১ মে পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়। ২১ মের পর আর অনুমোদন দেওয়ার কথা না থাকলেও মন্ত্রণালয় আরও ১ হাজার ১১২ জনকে তা দিয়েছে। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়া গেছেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৫ জন। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, অনুমোদন পেয়েও ৩১ হাজার ৭০১ জনের মালায়েশিয়া যেতে পারেনি।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ