বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই জাতীয় সংসদে গতকাল রবিবার পাস হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট। নতুন অর্থবছরের শুরুর দিন অর্থাৎ আজ ১ জুলাই থেকে এ বাজেট কার্যকর হচ্ছে। জাতীয় সংসদে গত ৬ জুন ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শীর্ষক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। গতকাল বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীগণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবিগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়। এই সব মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে বিরোধীদলের ৬ জন সংসদ সদস্য মোট ২৫১টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় খাতে ৩টি মঞ্জুরি দাবিতে আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর স্বতন্ত্র ও বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়।
এরপর সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৪ পাসের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন। এর আগে ২৯ জুন, শনিবার সংসদে অর্থ বিল-২০২৪ পাসের মাধ্যমে বাজেটের আর্থিক ও কর প্রস্তাব সংক্রান্ত বিধি-বিধান অনুমোদন করা হয়। সেখানে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবারের বাজেটে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় অপ্রদর্শিত অর্থ ১৫ শতাংশ কর দিয়ে প্রদর্শনের সুযোগের যে প্রস্তাব ছিল সেই বহাল রয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিশ্রেনির সর্বোচ্চ আয়কর ৩০ শতাংশের প্রস্তাব থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটি রাখা হয়নি। ফলে আগের মতো সর্বোচ্চ কর হার হবে ২৫ শতাংশ। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শুল্ক মুক্ত সুবিধা এবং মূলধনী পণ্য আমদানিতে শুণ্য শুল্ক সুবিধা আগের মতোই থাকছে। অর্থ বিলে আরো কিছু পরিবর্তন আনা হলেও বড় পরিবর্তন হয়নি।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর জন্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর বহির্ভূত ১৫ হাজার কোটি টাকা কর ব্যতিত প্রাপ্তি ৪৬ হাজার কোটি টাকা। সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে ঘাটতি ছিল জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণ থেকে ৯৫ হাজার ১শ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯শ কোটি টাকা আহরণ করার লক্ষ্য রয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫শ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ১৫ হাজার ৪শ কোটি টাকা, ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ২৩ হাজার ৪শ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।