spot_img

দেশে ৭০ শতাংশই সাইবার আক্রমণ হচ্ছে ব্যক্তি সচেতনতার অভাবে

দেশে ৭০ শতাংশই সাইবার আক্রমণ হচ্ছে ব্যক্তিসচেতনতার অভাবে।আর ভুক্তভোগীদের ১১দশমিক ৩৫ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন পর্ণোগ্রাাফিতে-এমন তথ্য প্রকাশ পায় এক গবেষণায়।
গবেষণায় বলা হয় দেশে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধের নতুন মাত্রা। ব্যক্তিগত ক্ষতির পাশাপশি আর্থিক ক্ষতি এবং প্রলোভনে প্রকট সাইবার অপরাধ। তবে সামাজিক লোক-লজ্জার ট্যাবুতে তা থকাছে অন্তরালেই। তাই গণ-সাইবার স্বাক্ষরতার পাশাপাশি দেশের সাইবার সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজস্ব সাইবার সল্যুশন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৪’ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উদীয়মান প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে (সিক্যাফ) অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিক্যাফ উপদেষ্টা প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান। গবেষণা প্রতিবেদন পেশ করেন সিক্যাফ গবেষণা দলের প্রধান ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক।
প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বটিআরসি’র মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন) ব্রিগে. জে. কাজী মুস্তাফিজুর রহমান,বাংলাদেশের প্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স (জি.এস.জি) বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ এ. হুসেইন, বিশ্বব্যাংক এর পরামর্শক ও প্রধান গবেষক, আইডিয়া ফাউন্ডেশন ভাইস প্রেসিডেন্ট, হুসেইন সামাদ, বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি’র কোষাধ্যক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার নাজমুস সালিহিন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ।সিক্যাফ সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপত্বি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নুরুল আশরাফী। অন্যান্যের মধ্যে সিক্যাফ সহ-সভাপতি এস এম ইমদাদুল হক এবং প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুল মুনয়েম সৈকত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিটিআরসি ডিজি কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যক্তিগতভাবে যত সচেতনতা বাড়ানো যাবে ততই কমানোর সম্ভব এই সাইবার অপরাধ। সচেতনতার দায়িত্ব সবাইকে সম্মিলিতভাবে পালন করতে হবে।
হুসেইন সামাদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়েছে। এখন এর দক্ষ ব্যবহার দরকার। সাইবার আক্রমণ বেশি হচ্ছে ব্যক্তিসচেতনতার অভাবে। তাই সবার সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।
মূল প্রবন্ধে মুশফিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন খাতে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ও সুবিধা এনেছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার স্পষ্ট উন্নতি, যোগাযোগ ও সংযোগের উন্নতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় অবদান। কৃষি ক্ষেত্রে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার মানব সভ্য তাকে আরো অনেক মানবিক করে তুলবে । উন্নতির পাশাপাশি কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা সাবধানে বিবেচনা করার দাবি করে। এই উদ্বেগগুলির মধ্যে য়েছে সম্ভাব্য গোপনীয়তা ও সুরক্ষা ঝুঁকি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি, প্রযুক্তির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি। উদীয়মান প্রযুক্তির সামাজিক সুবিধাগুলি সর্বাধিক করতে, একটি বহুমুখী কার্যক্রম জরুররি। এর মধ্যে নাগরিকদের অধিকার ও গোপনীয়তা রক্ষা করে এমন নীতি ও বিধিমালা তৈরি করা প্রয়োজন বলে উল্লেথ করা হয়।
নাজমুস সালেহিন বলেন, অনলাইন গ্যাম্বিলিংয়ের আড়ালে আছে মানিলন্ডারিং। তবে একে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোর ব্যাংকিং খাতে সহসাই একটি বিপদ আসছে।
ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ৪টি ধারা ছাড়া সাইবার অপরাধ আইন ২০১৩ এর সব গুলো ধারাই হ্যাকিংয়ের আওতায় থাকলেও তা জামিনযোগ্য। দেশে শিশু পর্ণো বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা হচ্ছে। এটা শঙ্কাজনক।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত সিক্যাফ সাইবার অপরাধ প্রবণতা— ২০২৪ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে অপরাদের হার হার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। মোট অপরাধের ১১দশমিক ৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পর পর দুই বছরের জরিপফল থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী সাইবার আক্রান্ত শিশুদের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৩দশমিক ৬৫ শতাংশ। ভুক্তভোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশের বয়সই ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এছাড়াও আক্রান্তের ৫৯ শতাংশই নারী। অপরাধের ধরনের মধ্যে ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে অ্যাকাউন্ট বেদখলের (হ্যাকিং) শিকার হয়ে শীর্ষে রয়েছে। আর বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দেশে সাইবারজগতে ‘পর্ণোগ্রাফি’ অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা বেড়েছে।
এছাড়াও ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪৭দশমিক ৭২ শতাংশ সামাজিক মর্যাদাহানী, ৪০দশমিক ১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির শিকার, এবং প্রায় সবাই মানসিক যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন। এদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮১দশমিক ২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়রি এবং ১৮দশমিক ৭৫ শতাংশ লিখিত অভিযোগ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগকারীদের মধ্যে ১২দশমিক ৫০ শতাংশ মন্তব্য করেননি। ৮৭দশমিক ৫০ শতাংশ সুফল পাননি। এসব প্রতারণায় আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিক্ষিত। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৪০দশমিক ৯০ শতাংশ ভুক্তভোগী উচ্চ মাধ্যমিক পাস, ২১দশমিক ২১ শতাংশ স্নাতক/সম্মান পাস, ১৬দশমিক ৬৬ শতাংশ মাধ্যমিক পাস এবং ১২দশমিক ৮৭ শতাংশ মাধ্যমিকের নিচে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ