spot_img

এনবিআরের প্রথম সচিবের যত্রতত্র সম্পদের পাহাড়

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন, শ্বশুর আহম্মেদ আলী ও শাশুড়ি মমতাজ বেগমসহ আত্মীয়স্বজনের নামে প্রায় ২০ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।
এরই মধ্যে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফয়সাল ও তার আত্মীয় স্বজনের নামে থাকা প্লট ও ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। আদালতের আদেশে ফয়সালের ১১ জন আত্মীয় স্বজনের নামে থাকা ১৯টি ব্যাংক হিসাব ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৭টি হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। বাড়ি, ফ্ল্যাট ও ব্যাংক হিসাব- সবমিলিয়ে প্রায় ১৭ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্র বলছে, সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ফয়সালের শ্বশুর-শাশুড়ির ব্যাংক হিসাবে। ফয়সালের ১১ স্বজনের নামে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ফয়সাল তার অবৈধ আয় লুকানোর জন্য স্বজনদের নামে ৭০০টির মতো ব্যাংক হিসাব খুলেছিলেন।
এনবিআরের এই কর্মকর্তা ২০০৫ সালে বিসিএস (কর) ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। নারায়ণগঞ্জ ট্যাক্স জোনের জয়েন্ট কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে এনবিআরের আয়কর বিভাগের প্রথম সচিব (ট্যাক্সেস লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন ফয়সাল।
শ্বশুরের নামে ৬ কোটি টাকার ফ্ল্যাট, শাশুড়ির নামে ৫ কোটি টাকার জমি
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিপরীতে অবস্থিত রূপায়ন স্বপ্ন নিলয় ভবন। প্রায় ৮৫ কাঠার ওপর নির্মিত চারটি ভবনের একটির ১১ তলায় থাকেন ফয়সাল ও তার পরিবার। গত বছরই রূপায়নের ফ্ল্যাটটি শ্বশুরের নামে কেনেন তিনি। দুই হাজার ৯৯০ স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাটটির বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। তবে কাগজে-কলমে ফ্ল্যাটটির মূল্য দেখানো হয়েছে ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আহম্মেদ আলী কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন তা নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক।
ফয়সালের শাশুড়ি মমতাজ বেগম গৃহিণী হলেও ঢাকার মেরাদিয়ায় কিনেছেন ১০ কাঠা জমি, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। যদিও নথিতে মমতাজ বেগম জমির মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৫২ লাখ টাকা।
স্ত্রী জেসমিনের নামে রয়েছে ভাটারা থানার বড় কাঁঠালদিয়া মৌজায় ৫ কাঠা জমি, এর বাজার মূল্য তিনি দেখিয়েছেন ১৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই জমির বাজারমূল্য প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ নতুন শহরে রয়েছে সাড়ে ৭ লাখ টাকার জমি। ফয়সালের নামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের ৫ জায়গায় প্রায় সাড়ে ১৫ কাঠা জমি রয়েছে। এসব জমির মূল্য তিনি দেখিয়েছেন ৪০ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
ফয়সালের ব্যাংক একাউন্টে ৫ কোটি ২১ লাখ টাকা ঃ
আদালতে জমা দেওয়া দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফয়সালের নামে ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ২১ লাখ টাকা রয়েছে। ফয়সালের স্ত্রী আফসানা জেসমিনের ৫টি ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এছাড়া ফয়সালের শ্বশুর আহম্মেদ আলীর আটটি ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ১১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যার মধ্যে ছয়টি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে ২০২০ ও ২০২৩ সালের মধ্যে, বাকি দুটি খোলা হয়েছে ২০০৭ ও ২০১০ সালে। ফয়সালের শাশুড়ি মমতাজ বেগমের নামে ১০টি ব্যাংক হিসাবে ৭ কোটি টাকা ও শ্যালক আফতাব আলীর ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জমার তথ্য পেয়েছে দুদক।
দুদকের প্রতিবেদনে, ফয়সালের স্ত্রী আফসানা জেসমিন, ফয়সালের ভাই কাজী খালিদ হাসান, শ্বশুর আহম্মেদ আলী, শাশুড়ি মমতাজ বেগম, শ্যালক আফতাব আলী, খালা শাশুড়ি মাহমুদা হাসান, মামা শ্বশুর শেখ নাসির উদ্দিন, আত্মীয় খন্দকার হাফিজুর রহমান, রওশন আরা খাতুন ও ফারহানা আফরোজের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এসব টাকা জমা হয়েছে। পরে তার বড় অংশ তুলে নেওয়া হয়েছে। জমা ও উত্তোলনের পর ফয়সাল ও তার স্বজনদের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে থাকা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭ কোটি টাকা। তাদের নামে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রও রয়েছে।
খুলনায় দুটি বাড়ির নাম ফলক সরিয়ে ফেলা হয়েছে
খুলনা অফিস জানায়,
এনবিআরের প্রথম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বাড়ি খুলনা মহানগরীর মুজগুন্নীতে। তার পিতার নাম কাজী আব্দুল হান্নান ওরফে ফিরু কাজী। খুলনার মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় কাজী ফয়সালের প্রায় দুই বিঘার জমির প্লট রয়েছে। এছাড়া একই এলাকার যশোর রোড়ের নেসারিয়া মাদ্রাসার পাশে প্রায় দুই বিঘার জমির ওপর তার বিলাসবহুল তিনতলা আরও একটি বাড়ি আছে। বাড়ির গাড়িঘরে হ্যারিয়ার ব্রান্ডের একটি গাড়ি রয়েছে। সেখানে তার মা বসবাস করেন । গত শুক্রবার বিকালে ওই বাড়িতে গেলে সাংবাদিক পরিচয় পাবার পর কেউই বাড়ির দরজা খোলেননি। দুটি বাড়ির গেটে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের নাম ফলক ছিল। সেই নাম ফলক তুলে ফেলা হয়েছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী মাহফুজুর রহমান লিটন জানান, কাজী ফয়সালদের এলাকার মানুষ সম্পদশালী হিসেবেই জানে। তবে তিনি এলাকায় কম আসতেন। তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন কয়েক দফা বিলাসবহুল টয়োটা ‘হ্যারিয়ার’ গাড়িতে তার কাছে সনদ নিতে এসেছেন। তিনি ঐ হ্যারিয়ার গাড়িতেই ঘোরাফেরা করতেন।
এদিকে, খুলনা মহানগরীর খালিশপুর এলাকায় ১১৩ নম্বর সড়কে কাজী ফয়সালের শ্বশুরবাড়ি। কাজী ফয়সালের দুর্নীতির খবর প্রকাশ হওয়ার পর হঠাৎ করে ঐ বাড়ি থেকে তারা আত্মগোপন করেছে। কেউ বাসার অবস্থানও দেখাচ্ছেন না। গত বৃহস্পতিবার রাতে কাজী ফয়সালের শ^শুর বাড়ির নাম ফলক খুলে ফেলা হয়েছে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ