প্রধানমন্ত্রীর স¤প্রতি ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে হওয়া সকল সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি বিএনপি প্রত্যাখ্যান করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,বিএনপির অবস্থান ভারতের বিরুদ্ধে নয়,শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। কানেকটিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেল যোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগীতা, ঔষধ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ এবং ভারতের ইনস্পেস ও বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, রেলমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, সমুদ্র বিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতা ইত্যাদি সমঝোতাগুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে। ভারতকে সকল প্রকার সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে ভারতের কাছে থেকে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ আদায় করতে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন এবং এটা ম্যান্ডেট বিহীন অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বহিঃপ্রকাশ।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।ফখরুল বলেন,স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ভারতের সঙ্গে দুটি চুক্তি ৫টি নতুন সমঝোতা স্বারক ও ৩টি চুক্তি নবায়নসহ ১০টি চুক্তি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করছি। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টনের কোনো চুক্তি না করা, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা বন্ধ না করা, একতরফাভাবে ভারতকে সব সুবিধা প্রদান করে বাংলাদেশের স্বার্থ ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ায়ার অবদান, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ সা¤প্রতিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে অতুলনীয়। বেগম খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদান করে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এই হীন চক্রান্ত করছে অবৈধ সরকার। শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রীকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বে-আইনী এবং সংবিধান বিরোধী। এই মামলায় জামিন পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার। ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিনযাবৎ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকেরা তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের সুপারিশ করেছেন। দলের পক্ষ থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে প্রেরণের দাবি জানানো হয়েছে। এমন কি পরিবারের পক্ষ থেকে দুই বার তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু অবৈধ সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে দেশনেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করেছে অনতিবিলম্বে দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানাচ্ছি। মির্জা ফখরুল বলেন, এই অবৈধ সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলছে। এই চুক্তিগুলোকে বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী হওয়ায় বিএনপি এই চুক্তিগুলো প্রত্যাখান করছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত সংবাদ সম্মেলন আগামী ২৮ জুন বিকাল ৩টা অনুষ্ঠিত হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন,গতকাল সকাল পর্যন্ত আমি যতটুকু জানি, গতকালকে তাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। তিনি সিসিইউতে ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা অ্যাডজাস্ট করতে পারেন না, সে কারণে সিসিইউর ফ্যাসিলিটিজগুলো কেবিনে নিয়ে তাকে শিফট করা হয়েছে। সেখানে তিনি এখন পর্যন্ত স্টেবেল (স্থিতিশীল) আছেন।বিএনপি মহাসচিব বলেন,দুই বছর একটা পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে ছিলেন (খালেদা জিয়া)। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বারবার চেষ্টা করার পরেও সেখানে ভালো চিকিৎসক পাঠানো হয়নি। বহু চেষ্টার পর যখন তাকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো, সেখানেও তিনি সুষ্ঠু চিকিৎসা পাননি।ফখরুল আরও বলেন,শর্ত সাপেক্ষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হলো। তখনই তার ধরা পড়ল লিভার সিরোসিস। এটা ছোটখাটো রোগ নয়, সিরোসিসৃ ইটস আ মেজর ডিজিজ। তখন ডাক্তাররা আমাদের বলেছিলেন যে, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া তার কোনো পথ নেই। এটা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। কিন্তু দেশের বাইরে চিকিৎসা করার অনুমতি দিচ্ছে না। আপনারা জানেন, আমরা কম চেষ্টা করিনি। সরকারের এখানে কোনো কৃতিত্ব নাই। আমরা এখন পর্যন্ত যেটুকু করেছি সেটুকু তার পরিবার এবং দলের চেষ্টাতেই হয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারদের নিয়ে এসেছি। তারা যে প্রসিডিউর করেছেন, সেই প্রসিডিউরে তিনি এখন পর্যন্ত টিকে আছেন। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠানোর জন্য সব ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল প্রায়, তার পরিবার আবেদন করেছিল। ফাইনালি যখন আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছে, প্রধানমন্ত্রী এটা রিজেক্ট করেছেন। শুধু এটা নয়, আমরা বিভিন্ন মিশনগুলোর কাছেও চিঠি দিয়েছিলাম। তারা চেষ্টা করেছেন, তারা বারবার চেষ্টা করেছেন ফেরত এসেছেন। তারা বলেছেন যে, সরি ভাই, উনি শুনলেন না। শি ইজ ভেরি ভিনডিক্টিভৃ. এই উচ্চারণটা করেছেন।’
গত ২৪ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ফখরুল। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা বলেন, স¤প্রতি মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত জলসীমায় নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ফলে বাংলাদেশের মূল ভ‚খÐের সঙ্গে সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। এই অবৈধ সরকারের নতজানু পরারষ্ট্রনীতির কারণেই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বারবার হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সভা জানায়, কিশোরগঞ্জে হাওড়ের মাঝখানে সড়ক নির্মাণ এবং বেশ কিছু এলাকায় মাটি ভরাট করে কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ করায় ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রæত নিষ্কাশিত না হওয়ার কারণে ভয়াবহ দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরসহ বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ সীমাহীন দুদর্শার মধ্যে পড়েছে। দুর্গত এলাকায় সরকারের কোনো ত্রাণ তৎপরতা দেখা যায়নি। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের জন্য সভায় দাবি জানানো হয়। বিএনপির একটি ত্রাণ টিম অতিদ্রæত সিলেট সফর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও সভায় জানানো হয়। এ ছাড়া ওষুধের মূল্য ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করায় জনগণের যে দুর্ভোগ সেটির জন্য সরকারের দুর্নীতি ও ভ্রান্তনীতিকে দায়ী করে অবিলম্বে ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য হ্রাসের জোর দাবি জানান বিএনপি নেতারা।
’গোপন চুক্তি করলে এখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকতো’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,’যারা এখন ভারত বিরোধীতা করছে তারা,নিজেরাই ভারতের কাছে বিক্রি হওয়া’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কীভাবে বিক্রি হলাম,তার প্রমাণ কী? আরে বিক্রি হলে তো আমরা সরকারে থাকতাম।তিনি বলেন, বৈঠক সব দেশের সঙ্গেই করতে পারি। গোপনে বৈঠক করবো কেন। ওপেনলি বৈঠক করি আমরা। আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, দরজা-জানালা সব সময় খোলা থাকবে। কান্টেটিভিটি আমার দেশের স্বার্থে হবে। নিজ দেশের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে হবে না। তিস্তার পানিকে বাদ দিয়ে কোনো চুক্তি হবে না। সরকার পানির বিষয়ে কিছু করছে না, সীমান্ত হত্যা নিয়ে কিছুই বলছে না।