spot_img

পরীমনির সাথে রাত্রিযাপন করে চাকরি হারালেন এডিসি সাকলায়েন

আলোচিত সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে রাত্রিযাপন করে চাকরি হারালেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. গোলাম সাকলায়েন। পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত-যাপন করা এবং স্ত্রীর অবর্তমানে রাজারবাগের বাসায় নিয়ে ১৭ ঘণ্টা অবস্থানের প্রমান মেলায় বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় গতকাল মঙ্গলবার তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। গত ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের শৃঙ্খলা-২ শাখার উপ-সচিব রোকেয়া পারভীন জুঁই স্বাক্ষরিত স্মারকে বিভাগীয় মামলায় তাকে চাকরি থেকে ‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’ গুরুদÐ দেয়ার বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে। পরে গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়। অভিযুক্ত গোলাম সাকলায়েন বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে ঝিনাইদহ ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত আছেন।
এদিকে, গোলাম সাকলায়েনের বিরুদ্ধে নিতে যাওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে চিত্র নায়িকা পরীমনি গণমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘আমি জানি না। তবে অবশ্যই ব্যক্তিগত আক্রোশ…কিন্তু এমনটা নয়, প্রেম-ভালোবাসা ও সম্পর্কের কারণে হয়েছে, তা আমি বিশ্বাস করি না। সাধারণত যে ট্যালেন্ট, সফল হয়, তার পেছনে অনেকেই লেগে থাকে। এটা নতুন কিছু না। নিঃসন্দেহে সাকলায়েন একজন ট্যালেন্ট ও সফল মানুষ, ওর পেছনেও অনেকে হয়তো লেগেছিল। তার এখনকার বরখাস্ত হওয়ার ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত। এটা খুবই অন্যায় হয়েছে। সাকলায়েনের প্রতি নিঃসন্দেহে অন্যায় হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৩ জুন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে জাতীয় পার্টির নেতা ও ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং তার সহযোগী অমির বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা চালানোর অভিযোগ আনেন পরীমণি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর নাসির উদ্দিন মাহমুদকে সহযোগীসহ রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলা তদন্তের অংশ হিসেবে পরীমনিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। তখনই ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েনের সঙ্গে সখ্যতা হয় পরীমনির। এরপর দুজনের মধ্যে শুরু হয় যোগাযোগ। নিয়মিত পরীমনির বাসায় যাতায়াত শুরু করেন গোলাম সাকলায়েন। মাঝে-মধ্যেই গাড়ি নিয়ে বের হতেন দু’জনে। নিজের জন্মদিনে পরীমনির সঙ্গে ঘনিষ্ট অবস্থাতেও দেখা যায় সাকলায়েনকে। সবশেষ পরীমনি ডিবির কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের রাজারবাগের মধুমতি ভবনের বাসায় গিয়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টা অবস্থান করেন।
এসব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর ২০২১ সালের ৭ আগস্ট সাকলায়েনকে ডিবি থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। পরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এরইমধ্যে জামিনে বেরিয়ে ২০২১ সালের ১৮ জুলাই পরীমনির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, মারধর, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আদালতে মামলা করেন নাসির উদ্দিন মাহমুদ। ২০২১ সালের ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। পরে তাকে বিদেশি মদসহ গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ মামলায় তিন দফায় মোট সাত দিন তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গ্রেপ্তারের ২৭ দিন পর ১ সেপ্টেম্বর পরীমনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন। যদিও গ্রেপ্তারের পর পরীমনি অকপটে সবকিছু স্বীকার করেছিলেন ।
ডিবি গুলশান বিভাগের এডিসি থাকাকালে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে ঘটনাক্রমে দেখা এবং যোগাযোগ শুরু হয় সাকলায়েনের। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নায়িকা পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন। পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা থেকে দেয়া তার ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণ অনুযায়ি ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমণির বাসায় অবস্থান করেছেন। নায়িকা পরীমনির মোবাইল ফোনের ফরেনসিক রিপোর্ট (সিআইডি কর্তৃক মামলার আলামত হিসেবে জব্দকৃত) পর্যালোচনায় দেখা যায়, তার ও পরীমণির আদান-প্রদানকৃত মেসেজগুলো ২৯ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট সামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণির ফেসবুক আইডি ও গোলাম সাকলায়েন সিথিল নামে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথোপকথন এবং তাদের হোয়াটস্অ্যাপ নম্বরে (১১ জুলাই-৪ আগস্ট ২০২১) কথোপকথন সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোনো সম্পর্কের নয় বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক।
গোলাম সাকলায়েনের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এরই বিধিমালার বিধি ৪ এর উপ-বিধি ৩(খ) বিধি মোতাবেক ‘গুরুদÐ’ হিসেবে চাকরি থেকে “বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান” দÐের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, বিসিএস পুলিশ ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তা সাকলায়েনের বাড়ি রাজশাহী জেলায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিসিএস ৩০তম ব্যাচের পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন। ৩০তম ব্যাচে পুলিশ ক্যাডারে তিনি প্রথম হয়েছিলেন।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ