আগামীকাল সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। গতকাল শনিবাার নাড়ির টান আর প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শেষ সময়ে রাজধানী ছেড়েছে অসংখ্য মানুষ। আজও ঢাকা ছাড়বে অনেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেষটায় ভোগান্তি নিয়েই মানুষ গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। উত্তরের পথে দীর্ঘ যানজট । একই অবস্থা ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট সড়কে। সংশ্লিষ্ট জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দফতরে কঠোর নির্দেশনার থাকলেও মহাসড়কে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে ছিলনা তদারকি। আর এ কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে মানুষকে পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। অপরদিকে শিডিউল মেনে ছেড়েছে ট্রেন। গতকাল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে ৬৯টি ট্রেন। তবে বাস টার্মিনালগুলোতে ছিল যাত্রীদের ভিড়। অভিযোগ ছিল অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও ছিল যাত্রীর চাপ। এদিকে ব্যস্ত ঢাকার রাস্তাঘাট এখন ফাঁকা। নেই চিরচেনা যানজট। আগের মতো শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না। অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ৷
এবার ঈদুল আজহার তিন দিন ছুটির আগের দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি পড়ে যাওয়ায় ঘরমুখো মানুষের মূল ¯্রােতটা মূলত বৃহস্পতিবারই (১৩ জুন) ছিল। শুক্রবারও (১৪ জুন) বহু মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। তবে সেই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় ছিল অনেকটাই কম। গতকাল শনিবার (১৫ জুন) ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। তবে তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি।
এদিকে, বাস ও লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে বাসগুলো। বাড়তি নিচ্ছে লঞ্চগুলোও। ঢাকা কমলাপুল রেলস্টেশন থেকে অধিকাংশ ট্রেনই ছেড়ে গেছে শিডিউল মেনে। ঢাকা রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীদের কোনো চাপ নেই। বেশিরভাগই কাছাকাছি পথের যাত্রীদের দেখা গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে রাজধানীর হানিফ ফ্লাইভার পর্যন্ত ছিল যানজটে ঠাসা। মহাসড়ক ছিল কাভার্ড ভ্যানের দখলে। অপর দিকে যাত্রাবাড়ী পোস্তগোলা ছিল তীব্র যানজট। আর এ কারণে ঘরে ফেরা মানুষকে পোহাতে হয় ভোগান্তি। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় সড়কে।
ঢাকা রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানিয়েছেন, যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দে ট্রেনে ভ্রমণ করছেন। কোনো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। বরং সময়মত ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীরা ট্রেন মিস করেছেন।তিনি আরও বলেন, গত ঈদের মতো এবারও কোনো ঝামেলা ছাড়াই যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পেরেছেন।
এ দিকে বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানিয়েছেন, ঈদের সময়ে সাধারণ ভাড়ার চেয়ে সামান্য কিছু ভাড়া বাড়তি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেটা প্রতি ঈদের সময়ই এ ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু যেটা বলা হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়ার কথা, সেটা ঠিক না।
তিনি বলেন, এটা হওয়ার কথাও না। যদি কোনো শ্রমি নিয়ে থাকে তাহলে অসাধু উপায়ে সে নিচ্ছে। এটা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।
ঈদের দিন বন্ধ থাকবে সব আন্তঃনগর ট্রেন ঃ বাংলাদেশ রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের দিন (১৭ জুন) সারাদেশে চলাচলকারী সব আন্তঃনগর ট্রেন বন্ধ থাকবে। শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনটি চলবে।সম্প্রতি ঈদযাত্রা উপলক্ষে নিজেদের কর্মপরিকল্পনায় এ সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
সিদ্ধান্তে বলা হয়, ঈদুল আজহার দিন বিশেষ ব্যবস্থায় কতিপয় মেইল এক্সপ্রেস অথবা বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। তবে কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না।
ফাঁকা ঢাকা, নেই চিরচেনা যানজট ঃ ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে আগেই বন্ধ হয়েছে স্কুল-কলেজ। এরপর গত বৃহস্পতিবার দিনের কর্ম দিবসের পর বন্ধ হয়েছে সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি অফিস। ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করতে ইতোমধ্যে বাড়ির পথে রাজধানীর অনেক বাসিন্দা। এতে ব্যস্ত ঢাকার রাস্তাঘাট এখন ফাঁকা। নেই চিরচেনা যানজট। আগের মতো শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না। অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা৷ গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, শাহবাগ এবং কাকরাইল মোড় এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।