spot_img

স্বর্ণ চোরাকারবারিদের মাফিয়ারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বর্ণ চোরাচালানের রুটের নিয়ন্ত্রন মাফিয়াদের হাতে। স্বর্ণ চোরাকারবারির পাশাপাশি ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবা পাচার হয়। স্বর্ণ ও মাদক পাচারের অর্থ হন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হয়। স্বভাবতই এই মাফিয়াদের হাতে স্বর্ণ চোরাচালানের রুটের নিয়ন্ত্রক ছাড়াও হন্ডির লেনদেনের একটি হিসাব রয়েছে। এই হিসাবে বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা হন্ডিতে লেনদেন হয় এই মাফিয়াদের হাতে। এই ক্ষেত্রে হন্ডির সঙ্গে নিয়ন্ত্রক গ্রæপরা আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি মাফিয়া হিসাবে পরিচিতি পায়। এরাই সমাজে ‘হোয়াইট কালার ক্রিমিনাল’ হিসাবে পরিচিত।
স্বর্ণ চোরাকারবারির রুটও আন্তর্জাতিকভাবে কাটআউট পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। দুবাই থেকে ঢাকা অথবা দুবাই থেকে কাঠমান্ডু হয়ে ঢাকায় আকাশপথে স্বর্ণ এদেশে আসার পর এই চালান ভারতের বিভিন্ন শহরে নিরাপদে পৌঁছানোর দায়িত্ব থাকে একেকজন মাফিয়াদের ওপর। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রভাবশালী এমপি ও রাজনৈতিক নেতারা দুইটি গ্রæপে বিভক্ত হয়ে নিয়ন্ত্রন করেন। এদের মধ্যে ঢাকা থেকে সড়কপথে ঝিনাইদহ দিয়ে যশোর প্রবেশের রুটটি স্থানীয় একজন সাবেক এমপি নিয়ন্ত্রন করেন। ঢাকা থেকে বরিশাল অথবা পিরোজপুর হয়ে সাগরপথে ফিশিং বোট দিয়ে স্বর্ণ চোরাকারবারির রুটটি নিয়ন্ত্রন করেন দক্ষিণাঞ্চলের প্রথমবারের মত নির্বাচিত একজন এমপি। মাত্র ৫/৬ বছরে তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সাগরপথে স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে।
পিরোজপুর থেকে বরগুনা হয়ে বাগেরহাট দিয়ে ওই চালান আবার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ওপারে পাচার হয়। ওপারের স্বর্ণ চোরাচালান ও হন্ডির নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশে একটি গ্রæপ অব কোম্পানিজ পরিচালনা করেন। বছর বিশেক আগেও ঝিনাইদহ এলাকা থেকে আলোচিত হুন্ডি কাজলের মাধ্যমে ওই গ্রæপটি সাবেক জোট সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ওই সময় তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করেছিল। হন্ডি কাজল ওপারে আত্মগোপন করার পর ওই রুটটির নিয়ন্ত্রন নেয় এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। ঢাকা থেকে রুটটি নিয়ন্ত্রন করেন বাগেরহাটের একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা। এই রুটটির মাধ্যমে দুবাই থেকে আকাশপথে ঢাকা অথবা চট্টগ্রামে স্বর্ণের চালান পৌঁছে। গত বছর ঢাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মাফিয়া ডনের সঙ্গে দুবাইয়ের স্বর্ণের চালান পাঠানোর আরাভ সিন্ডিকেটের বিরোধ বাঁধে। ওই সময় মাফিয়া ডনের একচেটিয়া আধিপত্যে আরাভ সিন্ডিকেট কোনঠাসা হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢাকার স্বর্ণ ব্যবসার অন্যতম একজন নিয়ন্ত্রকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নেন নির্বাচনের জন্য। স্বর্ণ ব্যবসার ওই গ্রæপটি সম্প্রতি মাফিয়াদের গ্রæপটির নিয়ন্ত্রক হন। এই মাফিয়া গ্রæপে রয়েছেন ঝিনাইদহের একজন সাবেক এমপি, যশোরের একজন সাবেক এমপি, ঢাকার দুই জন স্বর্ণ ব্যবসায়ী, একজন ডেভেলপার কোম্পানীর মালিক ও দক্ষিণাঞ্চলের একজন সদ্য নির্বাচিত এমপি। উঠতি মাফিয়া গ্রæপের ডনের সঙ্গে ওপারের শক্তিশালী গ্রæপটির সখ্যতা গড়ে ওঠে। এর মধ্যে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ও মহেশপুর সীমান্ত সংশ্লিষ্ট স্বর্ণ চোরাকারবারি গ্রæপটি ঢাকার আরেকটি গ্রæপের স্বর্ণের তিনটি চালান আত্মসাত করে। তিন চালানে আত্মসাত করা স্বর্ণের মূল্য গোয়েন্দা সংস্থা বলছে তিনশ কোটি টাকা। অনেকক্ষেত্রে ৫শ কোটি টাকা হতে পারে। এর প্রেক্ষিতে প্রতিপক্ষ গ্রæপ মাঝে মধ্যেই গোপনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে স্বর্ণের চালানের খবর জানিয়ে দেয়। এখানেই শুরু হয় প্রকাশ্যে বিরোধ। যার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের বাংলাদেশের শক্তিশালী মাফিয়া গ্রæপটি এমপি আনারকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ