spot_img

দুদকের মামলায় ড. ইউনূসসহ ১৪ আসামির বিচার শুরু

২৫ কোটি টাকা পাঁচার ও আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। অভিযোগ গঠন থেকে অব্যাহতি চেয়ে আসামিদের করা আবেদন নাকচ করে দিয়ে বুধবার দুর্নীতির এই মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন। অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রদানের পূর্বে ড. ইউনূসসহ সকল আসামির বিরুদ্ধে আনীত অর্থ পাঁচার ও আত্মসাতের অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়। এরপর দোষী না নির্দোষ জিজ্ঞাসা করলে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চান আসামিরা। বিচারক অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়েছে, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে ভুয়া সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টকে খাটি হিসাবে ব্যবহার করে জাল জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতপূর্বক উক্ত অপরাধ লদ্ধ অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপনপূর্বক আত্মসাত ও আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন। এ কারনে তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানি লন্ড্রারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হলো।
এদিকে অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্যগ্রহনের দিন ধার্য নিয়ে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হন দুই পক্ষের কৌসুলিরা। ড. ইউনূসের কৌসুলি ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ বলেন, এটা দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালের মামলা নয়। স্বাভাবিক নিয়মে এই মামলার বিচার হওয়ার কথা। এই অভিযোগ গঠন আদেশের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। এজন্য সময় প্রয়োজন। আপত্তি জানিয়ে দুদক কৌসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ১১ জুলাই দিন ধার্য হয়েছে, যা বলার ওইদিন সব বলবেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীরা বাক বিতন্ডায় লিপ্ত হন। পরে বিচারক ১৫ জুলাই দিন ধার্য করে দেন।
“একজন নাগরিককে খাচার ভেতর কেন পশুর মত দাড়িয়ে থাকতে হবে”
অভিযোগ গঠন আদেশ প্রদানের পূর্বে ড. ইউনূস বাদে ১৩ আসামিকে লোহার খাচা দিয়ে ঘেরা কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। ড. ইউনূসকে বিচারক বলেন, আপনি বাইরে থাকুন। তখন নোবেলজয়ী বলেন, সবাই যেহেতু গিয়েছে আমিও যাই। এরপর তিনিও কাঠগড়ায় গিয়ে দাড়ান। পরে আদালত থেকে বেরিয়ে ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, আজ সারাক্ষণ লোহার খাচার মধ্যে ছিলাম। এ নিয়ে আমি আগেও প্রশ্ন তুলেছি। যতক্ষণ অপরাধ প্রমাণ না হচ্ছে ততদিন নির্দোষ। মামলার শুনানিকালে নিরাপরাধ একজন নাগরিককে লোহার খাচার মধ্যে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এটা আমার কাছে অত্যন্ত অপমানজনক, গর্হিত কাজ বলে মনে হয়। শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, কারো ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য করা ঠিক নয়। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সবাই আওয়াজ তুলুন। একটা সভ্য দেশে কেন এরকম হতে যাবে। একজন নাগরিককে খাচার ভেতর কেন পশুর মত দাড়িয়ে থাকতে হবে। যারা আইনজ্ঞ আছেন, বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত তারা এ বিষয়টা পর্যালোচনা করে দেখুন লোহার খাচা রাখার দরকার আছে কিনা।
ড. ইউনূস বলেন, মানি লন্ডারিং, আত্মসাৎ, প্রতারণা এ জিনিসগুলো কখনো শিখি নাই, করি নাই কোনোদিন। কাজেই হঠাৎ করে প্রকান্ড এই শব্দগুলো আমার উপর আরোপ করা হচ্ছে। এটাই হচ্ছে হয়রানি। আমরা সারা জীবনতো মানুষের সেবাতেই কাটিয়ে দিই। সেবা করার জন্য অর্থ আত্মসাৎ করতে আমরা আসিনি। অর্থ ব্যয় করার জন্য এসেছি। তিনি বলেন, সুদখোর, দেশের শত্রæ, পদ্মা সেতুর অর্থ আটকে দিয়েছি, চারদিকে ষড়যন্ত্র করে বেড়াই-আমার বিরুদ্ধে এগুলো বলেই যাচ্ছে। জোর করে আমাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হলো। এগুলো অব্যাহতভাবেই চলছে-এটাই হয়রানি। আজকের নয়, ক্রমাগতভাবেই এই হয়রানি চলছে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ