spot_img

গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি তাঁর সরকারের সারাদেশের গৃহহীনদের বিনামুল্যে ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন।
পঞ্চম ধাপের দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৬ জেলায় আরো ১৮ হাজার ৫৬৬ গৃহহীন- ভ‚মিহীন পরিবারকে দেওয়া হয় জমিসহ ঘর। গড়ে প্রতি পরিবারে ৫ থেকে ৬ জন সদস্য হিসাবে লাখো মানুষের মুখে এখন স্বস্তির হাসি। এ যেন ঈদুল আজহার আগে আরেক ঈদ আনন্দ। প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে গতকাল বেলা ১১টায় তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এগুলো হস্তান্তর করেন। এ ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী ৩টি উপজেলা লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ, কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও এবং ভোলা জেলার চর ফ্যাশনের সাথে সরাসরি সংযুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ ৭০টি উপজেলাকে ভ‚মি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেন। এ পর্যায়ে ভ‚মিহীন-গৃহহীনমুক্ত হয়েছে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোণা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ল²ীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ-জেলার সকল উপজেলাসহ মোট ৭০টি উপজেলা । এ হিসাবে পূর্বে ঘোষিত জেলা-উপজেলাসহ মোট ৫৮টি জেলা ও ৪৬৪টি উপজেলা ভ‚মিহীন-গৃহহীনমুক্ত হলো। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে । পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫২০ জন (এক পরিবারের সদস্য আনুমানিক পাঁচ জন হিসাবে)। গড়ে প্রতি পরিবারে ছয় জন সদস্য হলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ লাখ ৭ হাজার ৪২৪ জন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ঈদ উপহার হিসেবে এসব ঘর গুলো দিয়েছি।’তিনি বলেন, ‘তাঁর সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশবাসীর সেবা করা। কারণ, দেশের জনগণের আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা থাকায় তারা বার বার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে।’২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এককভাবে ২৩৩টি আসন প্রাপ্তির উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছিল আমাদের ওপর। কাজেই যে মানুষগুলো আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে তাদের সেবা করাই আমাদের দায়িত্ব। সরকার প্রধান বলেন, ‘ঠিক আমার বাবা যেভাবে নিজেকে বাংলাদেশের জনগণের সেবক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেভাবেই তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের মানুষের সেবা করাকেই আমি কর্তব্য বলে মনে করি।’ শেখ হাসিনা বলেন, লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত এই বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না। এই বাংলাদেশকে এগিযে নিতে যেতেই হবে। এদেশের মানুষ ক্ষুধা-দারিদ্র থেকে মুক্তি পাবে। প্রত্যেকটি মানুষের জীবন সুন্দর হবে-সেটাই আমাদের লক্ষ্য। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে যে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ¡াস (রিমেল) হয়ে গেল সেখানে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমেধ্যেই আমরা তালিকা করেছি কোন কোন এলাকায় কতগুলো ঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। কতগুলো আংশিক বিধস্ত’ হয়েছে। যেগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরকে আমরা ঘর তৈরি করে দেব। আর ক্ষতিগ্রস্তদেরও আমরা ঘর পুণর্নিমাণে সহায়তা করবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পাশে আমরা আছি। প্রাথমিকভাবে যা যা প্রয়োজন তা করে যাচ্ছি এবং ঘর-বাড়ি যাদের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমি তাদের এটুকু বলতে চাই, আপনাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। প্রত্যেকেই নতুন ঘর যাতে পান, সেই ব্যবস্থা ইনশাল্লাহ আমি করে দেব এবং সেভাবেই আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রত্যেক এলাকা থেকেই আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং সে অনুযায়ী আমরা এই সহায়তা পাঠাব।শেখ হাসিনা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের মাঝে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর করেন তিনি। পরে তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। আর সে কারণেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। ঘরগুলো নির্মাণের কাজে জড়িতদের প্রধানমন্ত্রী তাঁর এবং জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া গৃহহীনদের মাঝে বিনামূল্যে ঘর বিতরণের এই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
উপকারভোগীরা কাঁদলেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে কাঁদালেন:
ঘর পেয়ে তিন জেলার উপকারভোগীরা কাঁদলেন। সেই কান্না দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ নিজে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে নিজেও কাঁদলেন।
ঘর পেয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে ভোলার চরফ্যাশন এলাকার চর কচ্ছপিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের বিবি আয়েশা বলেন, “আমার বাড়িঘর নদী ভেঙ্গে ফেলেছে। আমার স্বামী ২৪ বছর আগে লিভার ক্যান্সারে মারা গেছে। আমার সন্তানগুলোর লালন পালন করতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি কি দিয়ে আপনাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব। আমার একটি ভাঙ্গা ঘর ছিল। আমার এমন সামর্থ্য ছিল না একখান তিন এনে ঘরে লাগাইতাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাকে একটা ঘর দিয়েছেন। বিদ্যুৎ দিয়েছেন, টিউবওয়েল দিয়েছেন, স্কুল দিয়েছেন। আমি অনেক খুশি হয়েছি। আমি কখনো ভাবি নাই যে এমন একটা ঘর পাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে যে কি দিয়ে ধন্যবাদ দিব সে ভাষা আমার জানা নাই। আমি নামাজ পড়ে দোয়া করি আপনি যেন সুস্থ থাকেন, ভালো থাকেন। সব সময় দোয়া করি আপনারা যেন সুস্থ থাকেন ভালো থাকেন।”
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি খুশি হয়েছেন দেখে আমরা খুশি হয়েছি। আপনি এবং আপনারা যারা ঘর পেয়েছেন এটা দেখে আমি খুবই আনন্দিত যে আপনাদের জন্য আমি কিছু করতে পারলাম। এটাই বড় কথা। দোয়া করবেন দেশের জন্য।
চরফ্যাশনের চর কচ্ছপিয়া এলাকার আরেকজন উপকারভোগী জাহাঙ্গীর মাঝি তার অনুভ‚তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমার এখানে একটা ঘর ছিল। ঝড়-বন্যায আমার ঘরের টিনটি নিয়ে গেছে। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ক্ষমতা ছিল না এ ঘর মেরামত করার। আমি অনেক কষ্টে ছিলাম। ঘরের উপরে পলিথিন দিয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোনরকম জীবন যাপন করতাম। এখন আপনি আমাদের একটা ঘর দিয়েছেন, টিউবওয়েল দিয়েছেন, বিদ্যুৎ দিয়েছেন, এখানে একটি স্কুল দিয়েছেন। এখন আমরা অনেক সুখে আছি, শান্তিতে আছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি নামাজ পড়ে আপনার জন্য এবং আপনার পরিবারের জন্য দোয়া করি যেন আপনি দেশের জন্য ভালো কাজ করে যেতে পারে।” তিনি বলেন, “আপনি আমার মা, দেশের মা । আপনি একবার এসে যদি আমাদের দেইখা যান আমরা অনেক খুশি হতাম।”
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অনেক খুশি হয়েছি যে আপনারা খুশি হয়েছেন। আসলে ভোলা তো এমন একটি এলাকা সেখানে ঝড় বন্যা হয়। এর চারদিকে নদী, একদিকে ইলিশা একদিকে তেতুলিয়া সবসময় ভাঙ্গনের মধ্যে থাকে। বন্যা ঝড় জলোচ্ছ¡াস এসবের মধ্যেই অতিবাহিত করতে হয় ভোলাবাসীকে। আমরা চাই আপনারা সব অতিক্রম করে সুন্দর জীবন যাপন করেন । সবাই ভালো থাকবেন, আমাদের আমার জন্য দোয়া করবেন।
কক্সবাজার প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আশ্রম প্রকল্পের শুরুটা আমি কক্সবাজারে করেছিলাম। ১৯৯৭ সালে এই কাজ আমি নিজে সেন্টমার্টিনে গিয়ে শুরু করি। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতারা জমি দিয়েছিলেন। ঘর মেরামতের কাজ বাস্তবায়নের বিষয়টি দায়িত্ব নিয়ে আমি দিয়েছিলাম নৌবাহিনী উপর। তারা তা যথাযথভাবে পালন। আজ কক্সবাজারকে গৃহহীন মুক্ত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করতে পেরে আমার ভীষণ ভালো লাগছে।
কক্সবাজার আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী হোসনে আরা বেগম অনুভ‚তি প্রকাশে বলেন, “আমি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং স্বামী পরিত্যক্ত নারী। আমার হাঁটতে কষ্ট হয়। আমি আমার মেয়েদের নিয়ে খেয়ে, না খেয়ে বেঁচে আছি। আমি মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করি। আমি প্রতিবন্ধী বলে আমার স্বামী আমাকে রেখে চলে যায়। একটু বাঁচার জন্য মানুষের ধারে ধারে ঘুরে লাঞ্ছনা-বঞ্ছনার শিকার হয়েছি। প্রভাবশালীদের কাছে গিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ সহায়তা করেনি। কোন আমার মাথা গোজার ঠাই ছিল না। একটি কুঁড়েঘরে কষ্ট করে থাকতাম। আমার জীবনটা খুব কষ্টের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। মাঝেমধ্যে মনে হয়েছিল আমি মরে যাই, কিন্তু আমার সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে ডুকরে ডুকরে আমি বেঁচে আছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছ থেকে আমি একটি ঘর পেয়েছি, টিউবয়েল পেয়েছি, মাথা গোজার ঠায় পেয়েছি। আপনার কাছে আমি অনেক ঋণী। আমার মেয়েকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি ও সাহস পেয়েছি। আপনি আমাদের কক্সবাজারের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আপনাকে কক্সবাজার আসার জন্য আমি নিমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনি আমার মেয়েদের জন্য দোয়া করবেন যেন তারা লেখাপড়া করে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারে। আপনার কাছে দেশ থাকলে দেশ সুরক্ষিত থাকবে এবং সামনে এগিয়ে যাবে। আপনি হলেন যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা।”
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানতে চান তার কয় মেয়ে। জবাবে তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ে। একটা ক্লাস টুতে পড়ে। আরেকটা দুই বছর হয়েছে। তিনি ভাতা পান কিনা প্রধানমন্ত্রী জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ আপনার কাছ থেকে ভাতা পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ঘর পেয়েছেন। আর একটা ঋণ দেওয়া হবে, একটা ট্রেনিং করানো হবে। এটা হয়ে গেলে ঘরে বসে আপনারা রোজগার করতে পারবেন।
ওই আশ্রম প্রকল্পের আরেকজন উপকার ভোগী জেলে রবিউল আলম বলেন, আমি একজন গরিব জেলে। আমি সাগরে মাছ ধরতে যাই। কখনো মাছ পাই, কখনো পাই না। এতে করে মাঝেমধ্যে আমার ছেলে মেয়েদের না খেয়ে থাকতে হয়। এক বেলা খাইলে আরেক বেলা খাইতে পারতো না। ওই টাকায় সংসার চলত না। দুই তিন মাসের মধ্যে যখন সাগরে থাকতে হতো। যখন ঝড় বাতাস হয়, তখন আমার ছেলে মেয়েদের জন্য কষ্ট লাগে। ওখানে বসে তখন কাঁদতাম। তখন সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা হতো। কিন্তু আমি নেটওয়ার্ক পাইতাম না। আমি কান্না করতাম।
প্রধানমন্ত্রী জানতে চান তার কয় সন্তান। জবাবে তিনি বলেন, দুইটা মেয়ে এক ছেলে। একটা মেয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে, আর একটা ছেলে মাদ্রাসায় হেফজ করে। আর একটা ছোট কাজ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পড়ালেখা শিখুন আরো ভালো থাকুক এই দোয়া করি। এ সময় কক্সবাজারের একটি আঞ্চলিক গানের সাথে নৃত্য পরিবেশনা উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
লালমনিরহাট জেলায় সংযুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লালমনিরহাট একটি অবহেলিত অঞ্চল ছিল। দারিদ্র্য এবং শিক্ষা চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু। এগুলা প্রতিনিয়ত ছিল এমনকি যোগাযোগ ব্যবস্থা এমন খারাপ ছিল যে কোনরকম গাড়ি নিয়ে যেতে হতো। পথে বসে থাকতে হতো ঘন্টার পর ঘন্টা। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমরা তিস্তা নদীর উপর সেতু তৈরি করে দেই। প্রথমবার ক্ষমতায় সেটার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি, পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে তা বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সেই কাজ শুরু করি, যোগাযোগ ব্যবস্থা সুরাহা করি। পাশাপাশি গঙ্গাচড়ার সাথে লালমনিরহাটের একটা যোগাযোগ স্থাপন করি। এর মাধ্যমে রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাটের যোগাযোগ সহজতর হয়। শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ এভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি লালমনিরহাটি আমরা করেছি। এ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উদ্দেশ্য হল মানুষদের ট্রেনিং দেওয়া, মানুষদেরকে শিক্ষা দেওয়া। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। লালমনিরহাটে স্থান বন্দর স্থাপন করেছে। ছিটমহল সমস্যারও সমাধান হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ছিট মহল হস্তান্তরের এই বিষয়টি পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হল যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ছিটমহলে আমাদের যে অধিকার রয়েছে সেটি আমরা হারাই। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে যারা ক্ষমতায় এসেছে, এইচ এমন এরশাদ, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া- কেউ এ বিষয়টা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেননি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের সঙ্গে ২৫ বছর চুক্তি করেছিলেন। সংবিধান সংশোধন করে ছিটমহল আমাদের অধিকার সেটা নিশ্চিত করেছিলেন। আইন পাস করেছিলেন। ভারতে কিন্তু তাদের পার্লামেন্ট এটি পাস হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমি উদ্যোগ গ্রহণ করি। দীর্ঘদিন কাজ করে অবশেষে আমরা এটি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘদিন যারা সেখানে ছিল তাদের কোন পরিচয় ছিল না আজ সে পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, লালমনিরহাট এর ব্যাপক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কারণ এই অবহেলিত অঞ্চল গুলোকে আমি সুনির্দিষ্ট ভাবে ঠিক করেছিলাম যে, এখানে আরো উন্নত করা হবে। আজ গৃহহীন মানুষ সেখানে ঘর পাচ্ছে। নদী ভাঙ্গনের জায়গাগুলোকে আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নতি হবে এটা আমি চাই।
লালমনিরহাটের আশ্রয়ন প্রকল্পের উপকারভোগী ঝালমুড়ি বিক্রেতা বাবু মিয়া তার অনুভ‚তি ব্যক্ত করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে মা সম্বোধন করে বলেন, আপনি ঘর দিয়েছেন, এখন আমরা অনেক সুখে আছি। আমাদের যখন ঘর ছিল না, আমরা অনেক কষ্টে ছিলাম মা। হোটেলে কাজ করেছি। কিন্তু কোথাও থাকার জায়গা নাই, কোথায় থাকবো এই অনিশ্চয়তায় ছিলাম। হোটেলে কাজ করে হোটেলেই সারারাত থাকতাম। আবার পরের দিন কাজ শুরু করতাম। ছেলেমেয়ে নিয়ে মানুষের বাড়িতে থাকছিলাম। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। বৃষ্টি হলে বালবাচ্চা নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই কান্না করেছি। আমার মেয়ে বলতো বাবা আমাদের কি কোন ঘর হবে না? আমি আমার মেয়েকে বলতাম আল্লাহর কাছে দোয়া কর, আমাদের ঘর হবে। কিন্তু কিভাবে হবে আমি জানতাম না। আমার তো ঘর করার যোগ্যতা নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার চেষ্টায় আমরা ঘর পেলাম। আজকে আমি অনেক সুখি মা। মানুষের বাড়িতে যখন ছিলাম, দেখতাম ওরা শাকসবজি চাষ করত। আমি চেয়ে চেয়ে দেখতাম। ইচ্ছা হতো শাকসবজি চাষ করার। কিন্তু পারিনি। এখন নিজের ঘর পেয়েছি শাকসবজি চাষ করার সুযোগ পেয়েছি মা। আমি এখন হাঁস মুরগি পালতেছি, আমি এখন গাছ লাগিয়েছি। আমি এখন আমার রোপন করা গাছ থেকেই ফল পেরে খাওয়াবো। আমার লাগানো শাকসবজি থেকে শাকসবজি খাওয়াবো। আমার ঘর ছিল না, অথচ এখন আমি পাকা ঘরে থাকি।
অনুভ‚তি প্রকাশ করতে গিয়ে গৃহকর্মী শাহেরুন বেওয়া বলেন, আমি অনেক দুঃখী মা। আমার একটা ছেলে আছে যার কোন খোঁজ নেই। ২০ বছর হলো আমার ছেলের খোঁজ খবর নাই। দুইটা সন্তান দেখে আমার আমার ছেলের বউ মারা গেছে। দুইটা বাচ্চার খোরাক আমার দেওয়া লাগে। অনেক কষ্ট করে চলি। আমার ঘরবাড়ি কিছু নাই। মানুষ ঘরবাড়ির মধ্যে ঘুমায় আর আমি হু হু করে কান্না করি। একটা ঘরের লাইগা মেম্বার চেয়ারম্যান সবার কাছে যাই। মন্ত্রীর কাছে গেছি। মন্ত্রী বলছে যাও টিএনও’র কাছে যাও। পরে আমি টিএনও’র কাছে যাই। পরের টিএনও আমারে বললেন যাও এবার তোমার ঘর হবে। এখন আমি নিজের ঘরের মধ্যে আছি, পাকা ঘরের মধ্যে আছি। মনে হয় ঝড়ের মধ্যেও মা আমি তোমার কোলে আছি। এ সময় তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। বলেন, মা এখন আমি ঘর পাইছি। এত কষ্টে জীবন কাটিয়েছি, মনে হয় এখন তোমার আমি একটু জড়িয়ে ধরি। আমার তুমি ঘর দিয়েছে মা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ভাতা পান কিনা জিজ্ঞেস করেন। জবাবে তিনি বলেন, যা পাই তা দিয়ে ওষুধ কিনতেই শেষ হয়ে যায়। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ঔষধের ব্যবস্থা করা হবে। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তার এলাকায় যাইতে বলেন। প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেলে তাকে জড়িয়ে ধরার আকাঙ্ক্ষাও ব্যক্ত করেন।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,100SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ